জঞ্জালময়: পুরকর্মীদের ধর্মঘটের জেরে জমেছে জঞ্জালের স্তূপ। মেদিনীপুরের পথে পা ফেলাই দায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
টানা সাতদিন সাফাই বন্ধ শহরে। আবর্জনার পাহাড় জমেছে বিভিন্ন এলাকায়। ভ্যাট ছাপিয়ে জঞ্জাল এসে পড়ছে রাস্তায়। সব মিলিয়ে শহর মেদিনীপুরে এখন এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
পুর-কর্মীদের ধর্মঘটের জেরেই এই সঙ্কট। তবে পুরসভা সমস্যা নিয়ে উদাসীন বলে শহরবাসীর অভিযোগ। পরিস্থিতি দেখে আবর্জনা সাফাইয়ে নেমেছে মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এমকেডিএ)। রবিবার শহরের বেশ কয়েকটি ভ্যাটে জমে থাকা আবর্জনা সাফাই করা হয়েছে। এমকেডিএ-র চেয়ারম্যান তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, “পুরসভায় সাফাই ধর্মঘট চলছে। তাই এমকেডিএ শহরে সাফাই শুরু করেছে।’’
পুরসভায় সাফাই ধর্মঘট চলছে গত সোমবার থেকে। কেন এতদিনে সাফাইয়ের কাজে হাত দিল এমকেডিএ? প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, শনিবার মেদিনীপুরে সভায় যোগ দিতে এসেছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁকে পুরসভায় সাফাই ধর্মঘট চলার বিষয়টি জানানো হয়। ধর্মঘটের ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন পুরমন্ত্রী। কারা ধর্মঘট করছে, কী দাবিতে করছে, কবে থেকে করছে, সব কিছুই জেনে নেন। পরে এমকেডিএ-র কর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। পুরমন্ত্রী জানিয়ে দেন, রবিবার থেকে এমকেডিএ শহরে সাফাই শুরু করবে। পুরমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে নড়েচড়ে বসেন এমকেডিএ-র কর্তারা। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেন তাঁরা।
সেই মতো রবিবার থেকে শহরে সাফাই শুরু হয়েছে। অবশ্য এ দিন যে বেশ কয়েকটি ভ্যাট সাফাই হয়েছে, সেগুলো সবই বড় রাস্তার ধারে। ছোট রাস্তার নয়। বড় রাস্তার ধারে থাকা বাকি অনেক ভ্যাটেও এখনও আবর্জনার পাহাড় জমে রয়েছে। কবে সাফাই হবে তা অজানাই। তা ছাড়া, পুরো শহরে সাফাই চালানোর পরিকাঠামো পর্ষদের নেই। ফলে, সঙ্কট পুরোপুরি কাটছে না।
মূল সমস্যার সমাধান না করে এমকেডিএ-কে দিয়ে শহরে সাফাই শুরু করায় প্রশাসনকে বিঁধেছেন পুর-শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির নেতা তপন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এমকেডিএ কিছু এলাকায় সাফাইয়ের কাজ করছে বলে শুনেছি। প্রশাসন ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। এ ভাবে সমস্যার সমাধান হতে পারে না। শ্রমিকেরা আরও জোটবদ্ধ হচ্ছেন। আরও বৃহত্তর আন্দোলন হবে।’’ তপনবাবু বলেন, “এই গরিব শ্রমিকদের ব্যবহার করেই ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। ক্ষমতায় এসে সেই শ্রমিকদের কথাই ভুলে গিয়েছে।’’
‘মেদিনীপুর পুর-শ্রমিক সংগ্রাম কমিটি’-র ডাকেই মেদিনীপুরে পুর-ধর্মঘট চলছে। রবিবার সাতদিনে পড়েছে এই ধর্মঘট। আজ, সোমবারও পুরসভার সামনে শ্রমিক-কর্মচারীদের অবস্থান-বিক্ষোভ চলবে বলে জানিয়েছে কমিটি। অস্থায়ী ও ঠিকাকর্মীদের ন্যূনতম দশ হাজার টাকা বেতন, ওই হারে দীর্ঘদিন কর্মরতদের বর্ধিত বেতন দেওয়া, কর্মরত অবস্থায় মৃত কর্মীর পরিবারের একজনকে স্থায়ী চাকরি দেওয়া-সহ বেশ কিছু দাবিতে এই আন্দোলন বলে জানিয়েছে কমিটি। তপনবাবুর কথায়, “এমকেডিএ- কে দিয়ে কী ভাবে পুরো শহর সাফাই করা যায় দেখি। যুক্তিসঙ্গত দাবিতে ধর্মঘট হচ্ছে। দাবিপূরণ না- হলে ধর্মঘট প্রত্যাহারের প্রশ্নই নেই।’’ শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে সিটু। আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে তারা। সিটু নেতা সারদা চক্রবর্তী বলেন, “ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছেন শ্রমিকেরা।
তাই আমরা এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছি।’’