নজরে মেদিনীপুর

সদ্যোজাত যমজ মেয়েকে খুন করে ধৃত মা

বয়স হয়েছিল মাত্র ২৮ দিন। সবে পৃথিবীর আলো দেখা সেই যমজ কন্যাসন্তানকে খুনের অভিযোগ উঠল খোদ মায়ের বিরুদ্ধে। দুধের দুই শিশুকে রোদের মধ্যে চাদর চাপা দিয়ে দীর্ঘক্ষণ ফেলে রেখে প্রাণে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২৭
Share:

আদালত চত্বরে ধৃত গৌরী গিরি। বৃহস্পতিবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

বয়স হয়েছিল মাত্র ২৮ দিন। সবে পৃথিবীর আলো দেখা সেই যমজ কন্যাসন্তানকে খুনের অভিযোগ উঠল খোদ মায়ের বিরুদ্ধে। দুধের দুই শিশুকে রোদের মধ্যে চাদর চাপা দিয়ে দীর্ঘক্ষণ ফেলে রেখে প্রাণে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার আলিসাগড়ের এই ঘটনায় অভিযুক্ত গৌরী গিরিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যমজ মেয়ে হওয়ায় শ্বশুরবাড়িতে অশান্তির জেরেই এই ঘটনা বলে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান।

Advertisement

কন্যাসন্তান বাঁচাতে সরকারি উদ্যোগের অন্ত নেই। জন্মের আগে গর্ভস্থ শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ না করা, ‘কন্যাশ্রী’ থেকে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’-এর মতো প্রকল্প, কন্যাসন্তান জন্মালে হাসপাতাল থেকে তার নামে গাছের চারাবিলি, প্রত্যন্ত এলাকায় এ সব নিয়ে সচেতনতা শিবির— সবই হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের তত্ত্ব টেনে বোঝানো হচ্ছে, সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে, তা বাবা এবং মা দু’জনের জিনগত বৈশিষ্ট্যের উপরই নির্ভর করে। কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার দায় একা মায়ের নয়। তারপরেও যে মেয়ে হওয়ায় মায়ের উপর নির্যাতন হচ্ছে এবং তার জেরে অকালে ঝরে যেতে হচ্ছে কন্যাসন্তানদের, ডেবরার ঘটনা তারই প্রমাণ।

বুধবার যমজ মেয়ের মৃত্যুর পরে প্রশান্ত গিরি নিজে স্ত্রী গৌরীর নামে অভিযোগ দায়ের করেন। গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। কিন্তু গৌরী কি সত্যি নিজের সন্তানদের খুন করেছে? খড়্গপুরের এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডলের জবাব, “নির্দিষ্ট অভিযোগেই এই গ্রেফতার। খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” বৃহস্পতিবার ধৃতকে মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করে তিন দিনের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। গ্রামীণের বেনাপুরের বাসিন্দা গৌরীর সঙ্গে বিয়ে হয় আলিসাগড়ের প্রশান্তর। প্রশান্ত পেশায় দিনমজুর। সংসার চালাতে প্রশান্তর মা বিজলিরানিদেবীও দিনমজুরি করেন। প্রশান্ত ও গৌরীর পাঁচ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। তারপর যমজ মেয়ের জন্ম দিয়েছিল গৌরী।

Advertisement

পুলিশ তদন্তে জেনেছে, নুন-আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে জোড়া মেয়ের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে প্রথম থেকেই অশান্তি চলছিল পরিবারে। বুধবার দুপুরে স্বামী ও শাশুড়ি যখন মজুর খাটতে গিয়েছিলেন, তখন ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাড়িতেই ছিল গৌরী। পাঁচ বছরের ছেলে অভি ছিল ঘরের মধ্যে। অভিযোগ, বারান্দায় চড়া রোদ এসে পড়তেই গৌরী যমজ কন্যাসন্তান অম্বিকা ও অন্বেষাকে চাদর চাপা দিয়ে শুইয়ে দেয়। ধীরে ধীরে সেখানেই নিস্তেজ হয়ে যায় কচি শরীর দু’টো। বিকেলে কাজ থেকে ফিরে বিজলিরানিদেবী দেখেন, নাতনিরা বারান্দায় পড়ে রয়েছে। খানিক পরে প্রশান্তও বাড়ি ফেরেন। সদ্যোজাত শিশু দু’টিকে নিয়ে যাওয়া হয় ডেবরা গ্রামীণ হাসপাতালে। চিকিত্সকেরা জানান, তাদের মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশের এক সূত্রের দাবি, পারিবারিক অশান্তির জেরে গৌরী পরিকল্পনা করেই দুই মেয়েকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “রোদের মধ্যে সদ্যোজাতদের দীর্ঘক্ষণ চাদর চাপা দিয়ে শুইয়ে রাখলে তো এমনিতেই দমবন্ধ হয়ে মারা যাবে। এ ক্ষেত্রে তেমনটা হয়েছে বলে ধারণা। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে সব পরিষ্কার হবে।’’ এ দিন মেদিনীপুর মেডিক্যালের মর্গে মৃত শিশু দু’টির ময়নাতদন্ত হয়েছে। হাসপাতালে এসেছিলেন তাদের বাবা প্রশান্ত। তিনি বলছিলেন, “স্ত্রী যে এই ঘটনা ঘটাবে ভাবতেই পারছি না। ও তো মেয়েদের যথেষ্ট ভালবাসত।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “যমজ মেয়ে হওয়ায় বাড়িতে কোনও অশান্তি ছিল না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement