ছেলের প্রাণ বাঁচাতে আগেই কিডনি দান করেছেন মা। সম্প্রতি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মার দেওয়া কিডনিও অকেজো হয়ে গিয়েছে। এ বার ছেলেকে বাঁচাতে নিজেই কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধ চিত্তরঞ্জন রায়। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচ যে অনেক। সেই টাকা জোগাড় হবে কোথা থেকে, তা নিয়ে চিন্তায় চিত্তরঞ্জনবাবু।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শ্যামচকের বাসিন্দা চিত্তরঞ্জনবাবুর ছেলে সমীরণ রায় ২০ বছর বয়সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর দু’টি কিডনিই অকেজো। দুশ্চিন্তার শুরু তখন থেকেই। অনেক চেষ্টা করেও কিডনি জোগাড়ে ব্যর্থ হন সমীরণের পরিজনেরা। উপায় না দেখে মা পূর্ণিমাদেবী একটি কিডনি ছেলেকে দেন।
চিত্তরঞ্জনবাবুর সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। সামান্য জমিতে চাষ করে সংসার চলে। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের বিপুল খরচ আসবে কোথা থেকে, এই চিন্তায় চিত্তরঞ্জনবাবুর রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল। আনন্দবাজার পত্রিকায় এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশিতও হয়। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সহৃদয় ব্যক্তির সাহায্যে সমীরণের দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। তারপর তিনি সুস্থও হয়ে যান।
চিকিৎসকদের পরামর্শে বিয়েও করেন তিনি। রোজগারের জন্য গুজরাতের একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতে যান সমীরণ। সম্প্রতি গুজরাতেই তাঁর শরীর ফের খারাপ হতে শুরু করে। গুজরাত থেকে বাড়ি ফিরে আসেন বছর আঠাশের সমীরণ। চিকিৎসকেরা সমীরণকে দেখে জানান, মায়ের দেওয়া কিডনিও বিকল হয়ে গিয়েছে। সমীরণ বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। এ বার ফের কে কিডনি দেবেন, কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচই বা আসবে কোথা থেকে— তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন সমীরণের পরিজনেরা। চিত্তরঞ্জনবাবুর কথায়, “আমাদের মাত্র ৩০ ডেসিমেল জমি রয়েছে। বহু কষ্টে দু’বেলা খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে এত টাকা পাব কোথায়?”
চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন, “চিকিৎসকেরা আমায় জানিয়েছেন, বয়সের কারণে আমরা কিডনি কিছুটা কমজোর। কিন্তু আমার কিডনি দেওয়া ছাড়া উপায়ই বা কী।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কেউ তো কিডনি দেবে না। কিডনি চক্র নিয়ে যা দেখছি, তা পেতে হলেও অনেক টাকার দরকার। তাই নিজেই কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু ছেলের দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন করার খরচ কী ভাবে জোগাড় করব ভেবেই পাচ্ছি না।”