নবান্নের নির্দেশ মেনে তৎপরতা শুরু হয়েছিল মাস দেড়়েক আগে। বর্ষা আসার ঠিক আগে জঞ্জাল সাফাই, নালা পরিষ্কার— সবই সেরে রেখেছিল তমলুক পুরসভা। গত মরসুমে এই শহরেই ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। পুর-প্রশাসনের তৎপরতায় জেলা সদরের বাসিন্দারা এ বার তাই খানিকটা স্বস্তির শ্বাস ফেলেছিলেন। কিন্তু জুলাই মাসের মাঝামাঝি একেবারে বদলে গিয়েছে ছবিটা।
গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফের বিপর্যস্ত শহর। রাজ্যের মিশন নির্মল বাংলা অভিযানের অঙ্গ হিসেবে শহরের প্রতি ওয়ার্ড এলাকায় জঙ্গল ও নিকাশিনালা সাফাই করা হলেও তা নিয়মিত হয় না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তারই ফলে ফের বড় নিকাশিনালাগুলির বেশিরভাগই ময়লা-আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। দিনেরাতে মশার দাপটে নাজেহাল শহরের বাসিন্দারা। ভরা বর্ষাতেও শহরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মশা মারার জন্য পুরসভার তেমন উদ্যোগী নয় বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
শহরের পাশেই রূপনারায়ণ নদ। তার সঙ্গেই যুক্ত রয়েছে শহরের শঙ্করআড়া, পায়রাটুঙ্গি, গঙ্গাখালি ও প্রতাপখালির মতো চারটি বড় খাল। কিন্তু দেড়শো বছরের বেশি পুরনো এই পুরসভায় নিকাশি ব্যবস্থা একেবারেই অপরিকল্পিত। সে জন্য নিকাশিনালায় আবর্জনা জমে থাকে সারা বছর। বৃষ্টি হলে জল নালা ছাপিয়ে রাস্তা ভাসিয়ে দেয়। কার্যত মশার আঁতুড় ঘরে পরিণত হয় বড় নালাগুলি।
তমলুক পুরসভার ২০টি ওয়ার্ডে জনসংখ্যা ৭০ হাজারেরও বেশি। শহরের পার্বতীপুর এলাকার দে পাড়া, মালিজঙ্গল পল্লি, শালগেছিয়া, পদুমবসান ও আবসবাড়ি মতো বেশ কিছু এলাকায় মশার দাপটে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। পার্বতীপুরের বাসিন্দা কমল কবিরাজের বলেন, ‘‘পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি এসে কেবল লিফলেট বিলি করে যান আর বলেন পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন। কিন্তু মশা মারার রাসায়নিক বা ধোঁয়া দিয়ে যান না কেউ।’’ কমলবাবুর দাবি, সারা দিনরাত বাড়িতে মশা মারার ধূপ জ্বালিয়ে রাখতে হয়। তাতেই শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকের। মালিজঙ্গল পাড়ার বাসিন্দা অনুপমা মালাকারের অভিযোগ, ‘‘মাইকে কেবল প্রচার করছে সচেতন হোন। আমরা তো আর নালায় নেমে পরিষ্কার করব না। সেটা কে করবে? আমার ঘর পরিষ্কার রাখলেও মশার হাত থেকে তো নিস্তার নেই।’’
এ সব অভিযোগ অবশ্য মানেত নারাজ পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন। তাঁর দাবি, ‘‘মশার দাপট রুখতে শহরের প্রতিটি এলাকায় নিয়মিত জঞ্জাল ও নিকাশিনালা সাফাই করা হচ্ছে। মশা মারার জন্য তেলও ছড়ানো হচ্ছে। তবে অসুস্থতার আশঙ্কায় অনেক বাসিন্দারা মশা মারার ধোঁয়া ছড়ানোপছন্দ করেন না। তাই ওটা বেশি ব্যবহার করা হয় না।’’ যদিও পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সাতটি স্প্রে মেশিন ও দু’টি ফগ মেশিন বা কামান রয়েছে। খরচ বেশি হয় বলেও গত ছ’মাস মশা মারার কামান ব্যবহার করা হয়নি। ফলে বাড়ছে মশার দাপটে। ক্ষোভ বাড়ছে বাসিন্দাদের মধ্যে।