ট্রাঙ্কে থরে থরে সাজানো পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। এ রকম ১৫টি ট্রাঙ্কে জমানো রয়েছে নয় নয় করে ১১৪ কোটি টাকা! ব্যাঙ্ক জমা নিতে না চাওয়ায় তালাবন্দি এই টাকা ভর্তি ট্রাঙ্কগুলি পড়ে রয়েছে মেদিনীপুর মুখ্য ডাকঘরে। এই টাকা নিয়ে কী করবেন, ভেবে নাজেহাল ডাকঘর কর্তৃপক্ষ।
গত ৮ নভেম্বর পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করার কথা ঘোষণা হয়। তারপর থেকেই ব্যাঙ্কে ব্যাঙ্কে পুরনো নোট বদলাতে ভিড় জমান গ্রাহকেরা। ডাকঘরেও পুরনো নোট জমা নেওয়া হয়। ডাকঘরে জমা পড়া এই পুরনো নোট জমা দেওয়া হয় স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই)-এ। ডাকঘর সূত্রে খবর, প্রথম দিকে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বাতিল নোট জমা নেওয়ায় কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু পরে এসবিআই টাকা জমা নিতে না চাওয়ায় ডাকঘরেই পড়ে রয়েছে বাতিল নোট ভর্তি ট্রাঙ্ক।
মেদিনীপুর মুখ্য ডাকঘরের সিনিয়র পোস্টমাস্টার বিকাশকান্তি মিশ্রর অভিযোগ, ‘‘নোট বাতিলের ঘোষণার পর প্রথমদিকে ডাকঘরে জমা পড়া পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নিয়ে নিত স্টেট ব্যাঙ্ক। যদিও দিনকয়েক পর থেকেই ব্যাঙ্ক আর টাকা জমা নেয়নি।’’ এ বিষয়ে এসবিআইয়ের মেদিনীপুর শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার শক্তিকুমার ঘোষ জানান, নোট বাতিলের ঘোষণার পর প্রথম কয়েকদিন পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট জমা নেওয়া হয়। পরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) একটি নির্দেশিকায় জানায়, চেস্ট নেই এমন ব্যাঙ্কের টাকা আগে জমা নিতে হবে। সেই মতো ব্যাঙ্ক ছাড়া অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের থেকে পুরনো নোট জমা নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শক্তিবাবু জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর ব্যাঙ্কের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এক নির্দেশিকায় জানান, ব্যাঙ্কে থাকা আরবিআই-এর চেস্টে বন্ডের মাধ্যমে ডাকঘরের মতো নন-ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠানকে পুরনো টাকা জমা রাখতে হবে। ৩১ ডিসেম্বর মেদিনীপুর ডাকঘর কর্তৃপক্ষ ওই নির্দেশিকার কথা জানতে পেরে ব্যাঙ্কে আসেন। সেই সময় তাঁদের জানানো হয়, পুরো প্রক্রিয়া মেনে আরবিআইয়ের চেস্টে টাকা রাখলে জমা নেওয়া হবে। যদিও ডাকঘর কর্তৃপক্ষ জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে টাকা জমা দিতে চাওয়ায় নেওয়া হয়নি। তিনি বলছেন, ‘‘সময়ের মধ্যে টাকা জমা দেওয়া না হলে আমাদের কিছু করার নেই। সময় পেরিয়ে গেলে কম্পিউটারে টাকার অঙ্ক ‘এন্ট্রি’ করা যায় না। তাহলে টাকার হিসেব মেলানো যাবে না।’’
যদিও বিকাশকান্তিবাবুর দাবি, ৩১ ডিসেম্বর গেলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ টাকা নিতে চাননি। গত ৩ জানুয়ারি সকালে ফোন করে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তারপরে তড়িঘড়ি ট্রাঙ্ক কিনে পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট ভরে ফেলা হয়। যদিও ওই দিন বিকেলে ট্রাঙ্কগুলি ব্যাঙ্কে নিয়ে যাওয়ার সময় এসবিআই ফের জানায়, তারা আর টাকা জমা নেবে না। সেই থেকেই ডাকঘরে টাকা ভর্তি ট্রাঙ্ক পড়ে রয়েছে।
ডাকঘর সূত্রে খবর, একমাসের বেশি সময় ধরে ডাকঘরে টাকা পড়ে থাকায় এসবিআইয়ের চিফ জেনারেল ম্যানেজার (সিজিএম) পার্থপ্রতিম সেনগুপ্তকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানান ডাকঘর কর্তৃপক্ষ। মেদিনীপুর মুখ্য ডাকঘরের সিনিয়র পোস্টমাস্টার বিকাশবাবু বলেন, ‘‘সমস্যার কথা স্টেট ব্যাঙ্কের সিজিএমকে জানিয়েছিলাম। এরপরে এসবিআইয়ের মেদিনীপুর শাখাকে চিঠি দিয়ে সহযাগিতা করার কথা বলেছেন সিজিএম। সেই চিঠির প্রতিলিপি আমাদের কাছেও পাঠানো হয়। এরপর ফের এসবিআইয়ের মেদিনীপুর শাখায় যোগাযোগ করা হয়। যদিও কোনও সদুত্তর মেলেনি।’’ এসবিআইয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার শক্তিবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনও নির্দেশিকা আসেনি।’’