Dol Celebration at Midnapore

দোলের মিঠাইয়ে মিশে ঐতিহ্য-আধুনিকতা

বগড়ির কৃষ্ণরায় মন্দিরও প্রাচীন। দোল উৎসবে এখানকার কৃষ্ণনগর মন্দির থেকে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ পালকিতে শিলাবতী নদী পার করে রঘুনাথবাড়ির মন্দিরে আনা হয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫ ০৯:২৮
Share:
তমলুকের মহাপ্রভু মন্দিরে দোলের ৫৬ ভোগ।

তমলুকের মহাপ্রভু মন্দিরে দোলের ৫৬ ভোগ। নিজস্ব চিত্র।

মিষ্টির নাম অবলেহ। মিষ্টান্ন নিজুক ও দুধলুচি। আবার ব্রত করা ভক্তদের খাদ্য বাদাম সিদ্ধ, কাঁচকলা সিদ্ধ। দোল উৎসবে দেবতার ভোগ আর উৎসবে যোগ দেওয়া মানুষের খাদ্যের বৈচিত্র ও ব্যাপ্তি এমনই চমকপ্রদ। দোলে কোথাও খাদ্যে ঐতিহ্যের প্রতি একনিষ্ঠতা থাকে। কোথাও সময়ের সঙ্গে বদলও আসে। দোলের ঐতিহ্যের খাবারের খোঁজ করতে হবে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে মন্দিরগুলোয়। তৈরি হয় কৃষ্ণের নামে মিষ্টিও। যেমন গোপালবল্লভ। বদলের খাবারের খোঁজ মিলবে সাধারণের আয়োজিত উৎসবে।

Advertisement

তমলুক শহরের মহাপ্রভু মন্দিরে দোল উৎসব প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন। এখানে ৫৬ ভোগ ও দ্বাদশ ব্যঞ্জন দেওয়া হয়। ৫৬ ভোগের মধ্যে থাকে বিভিন্ন রকমের মিষ্টান্ন। যেমন মোহনভোগ, মাঠা পুলি, রসাবলি, হামসা কেলি, কণিকা, বেসর, মালপোয়া, অবলেহ, বাল্কা, মুরব্বা, মঠরি, ফেনি, পরিষ্ঠ, পুরী, খজলা, চন্দ্রকলা, খুরমা, আরায়া পরিখা, মণ্ডকা, মালাই, বিলসারু, রাবড়ি, শিরা, শিখরণ, গোপালবল্লভ, বটক, শুকনো মিষ্টি ইত্যাদি। মহাপ্রভু মন্দিরের সেবাইত গৌর কিশোরানন্দ দেব গোস্বামী বলেন, ‘‘শ্রীচৈতন্য তমলুকে এসেছিলেন। ৫৬ ভোগে আমাদের মন্দিরে ১০-১২ রকমের মিষ্টান্ন তৈরি করা হয়।’’

বগড়ির কৃষ্ণরায় মন্দিরও প্রাচীন। দোল উৎসবে এখানকার কৃষ্ণনগর মন্দির থেকে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ পালকিতে শিলাবতী নদী পার করে রঘুনাথবাড়ির মন্দিরে আনা হয়। এই মন্দিরে তিনবেলা ভোগ দেওয়া হয় রাধাকৃষ্ণকে। সকালে জলসেবায় থাকে লুচি, নিজুক মিষ্টি, হুড়ুম (চিড়েভাজা জাতীয়), অন্য মিষ্টি, মুড়কি, ছানা, দই। দুপুরে অন্নভোগে থাকে বাদশাভোগ চালের ভাত, কুমড়ো-সহ আনাজের তরকারি, আলুপোস্ত, টমেটো বা আমড়ার চাটনি, পায়েস। রাত্রি ৮টায় নৈশসেবা হয় মিষ্টি, মুড়কি, ছানা আর দুধলুচিতে। দুধলুচি বিশেষ বৈশিষ্ট্য বগড়ির ভোগের। লুচিকে কড়া করে ভেজে গুঁড়ো করে ফুটন্ত দুধে ফেলে গুড় দিয়ে পায়েসের মতো করা হয়। দুধলুচির মতো একটা খাবারের সন্ধান মেলে বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায়ের ‘মিষ্টান্না পাক’ বইয়ে। তিনি অবশ্য একে লুচির পায়েস বলেছেন। তবে তা চিনি দিয়ে হয়। আর অন্য সুগন্ধিও থাকে। বগড়িতে ভোগ অবশ্য সারা বছরের।

Advertisement

শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরে রাধাগোবিন্দ জিউয়ের মন্দিরও প্রাচীন। মহন্ত শ্রীকৃষ্ণ কেশবানন্দ দেবগোস্বামী বলেন, ‘‘ভোগের কোনও পরিবর্তন হয়নি। নগর কীর্তনের পর নানা ফলমূল বিতরণ করা হয়। মহাপ্রভুর জন্মতিথি হিসেবে অনেকেই আবার ব্রত করেন। তাঁদের আলু সেদ্ধ, বাদাম সেদ্ধ, কাঁচকলা সেদ্ধ, ফলমূল জন্য ছানার বিভিন্ন রকম পদ দেওয়া হয়। সর্বসাধারণের জন্য ভাত, ডাল, নানা রকম ভাজা, শুক্তো, কুমড়োর তরকরি, পটল ও বেসনের রসা, পাঁপড়, পায়েস থাকে।’’

ময়নাগড়ের রাজ পরিবার কুলদেবতা শ্যামসুন্দর জিউর মন্দিরে দোল উৎসবে বাল্যভোগ দেওয়া হয় লুচি, সুজি, ক্ষীর, ছানা ও বিভিন্ন রকমের নাড়ু-সহ মিষ্টান্ন দিয়ে। মহিষাদলের মধ্য হিংলির রাধা-কৃষ্ণের মন্দিরে ভোগ দেওয়া হয় ঘি, পাতিলেবু, আলুভাজা, পটলভাজা, গোবিন্দভোগ চালের ভাত, সোনামুগের ডাল, শাকের তরকারি, এঁচোড়, পনির টমেটো চাটনি, এবং সন্দেশ। ঘাটাল শহরের কুশপাতা লাগোয়া বেলপুকুরে রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দিরেও উৎসবে সকলকে অন্নভোগ-সহ পাঁচ রকম তরকারি বিতরণ করা হয়।

মন্দিরের বাইরে দোল উৎসবে কিছু বদল এসেছে। আগে দোলমেলায় বিক্রি হত জিলিপি, মালপোয়া, কাঠিগজা, খাজা। এখন বেশি বিক্রি হয় ফাস্টফুড। সেটা বগড়ির মতো প্রাচীন মেলাতেও। আবার বসন্তোৎসবের আয়োজনে চিনির মঠ, জিলিপির দিন গিয়েছে অনেকটাই। যেমন মেদিনীপুর। এখানে বেশিরভাগ জায়গায় অনুষ্ঠান শেষে লাড্ডু দেওয়া হয়। বিশেষ করে বোঁদের লাড্ডু। শহরের বিদ্যাসাগর হলের মাঠে ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উৎসবের যুগ্ম আহ্বায়ক আলোকবরণ মাইতি বলছেন, ‘‘এক সময়ে আমরা লাড্ডু বিলি করতাম। এখন উৎসব প্রাঙ্গণে চা-বিস্কুটের ব্যবস্থা রাখি আমরা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement