প্রতীকী ছবি।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক। সেখানেই কি না, এক রোগীর রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে ‘ভুল’ হল! রোগীর রক্তের গ্রুপ ‘বি নেগেটিভ’। অথচ ব্লাড ব্যাঙ্কের পরীক্ষায় উঠে এল ‘এবি নেগেটিভ’। রোগীর পরিজনেদের জানানো হল, ‘এবি নেগেটিভ’ গ্রুপের রক্তই জোগাড় করতে হবে। ঘটনা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। অঙ্গ প্রতিস্থাপন বা শরীরে রক্ত দেওয়ার (ব্লাড ট্রান্সফিউশন) দরকার পড়লে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা ছাড়া গতি থাকে না। চিকিৎসকেরা মানছেন, এ ক্ষেত্রে সামান্যতম গাফিলতিও চরম পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল সেন বলেন, ‘‘কী হয়েছে, কী ভাবে হয়েছে, দেখা হচ্ছে। সব দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’ মেডিক্যালের এক চিকিৎসক মানছেন, ‘‘কারও শরীরে ভুল রক্ত ঢুকলে তাঁর শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়তে পারে। কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। রক্ত জমাট বেঁধে অর্গ্যান ফেলিওর, স্ট্রোক, এমনকি, মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘অবশ্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতির ফলে রক্তের মিসম্যাচ হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে গিয়েছে।’’
মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মমতা বিবি নামে এক রোগী। হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগে ভর্তি রয়েছেন তিনি। অস্ত্রোপচারের জন্য রক্তের প্রয়োজন ছিল। চিকিৎসক বিষয়টি রোগীর পরিজনেদের জানান। নিয়মমাফিক ব্লাড ব্যাঙ্কে রিকুইজেশন পাঠানো হয়। ব্লাড ব্যাঙ্ক নমুনা পরীক্ষা করে জানায়, রোগীর রক্তের গ্রুপ ‘এবি নেগেটিভ’। শনিবার মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কে এই গ্রুপের রক্ত মজুত ছিল না। খোঁজখবর নিয়ে রোগীর পরিজনেরা জানতে পারেন, হুগলির আরামবাগ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে ওই গ্রুপের রক্ত মজুত রয়েছে। সেখানে নমুনা নিয়ে যান পরিজনেরা। নমুনা পরীক্ষার পরে ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক জানিয়ে দেয়, মিসম্যাচ হয়েছে। অর্থাৎ যে গ্রুপের রক্ত রোগীর লাগবে বলে মেডিক্যাল থেকে লিখে দেওয়া হয়েছে, নমুনায় থাকা রক্ত সেই গ্রুপের নয়।
চিকিৎসাধীন মমতার ছেলে শেখ ইন্তাজ জানান, রক্তের গ্রুপ কী, সেটা জানায়নি আরামবাগের ব্লাড ব্যাঙ্ক। মেদিনীপুরে ফিরে নমুনা নিয়ে এক বেসরকারি প্যাথোলজি সেন্টারে যান রোগীর পরিজনেরা। পরীক্ষা করে ওই সেন্টার জানায়, রক্তের গ্রুপ ‘বি নেগেটিভ’। চিকিৎসকেরা মনে করাচ্ছেন, মানুষের রক্তের লোহিত কণিকার মধ্যে সাধারণত দু’টি অ্যান্টিজেন পাওয়া যায়। ‘এ’ এবং ‘বি’। এই দুই অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিই রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে। যা উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তান তার বাবা- মায়ের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী, রক্তের নমুনার গ্রুপ নির্ধারণ এবং ক্রস ম্যাচ করেই প্রয়োজনীয় ইউনিটের রক্ত দেওয়া হয় রোগীকে। ইন্তাজ বলছেন, ‘‘মেডিক্যাল থেকে জানানো হল, আমার মায়ের রক্তের গ্রুপ ‘এবি নেগেটিভ’। প্যাথোলজি সেন্টার জানাল, রক্তের গ্রুপ ‘বি নেগেটিভ’। পরে জানা গেল, প্যাথোলজি সেন্টারের নির্ণয়ই ঠিক। মেডিক্যালে এমন ভুল কী করে হল, সেটাই বুঝতে পারছি না। ভুলের জন্য আমাদের হয়রান হতে হল। আমি হাসপাতালে অভিযোগ জানাচ্ছি।’’
মেদিনীপুর ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে শপথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এমন ভুল হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা উচিত।’’ বিষয়টি নিয়ে মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কের কেউ মুখ খোলেননি। ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্মী বলছেন, ‘‘এ বিষয়ে যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলবেন।’’ তবে তিনি মানছেন, ‘‘নিশ্চিতভাবে কোথাও একটা ভুল হয়েছে। রক্তের গ্রুপ কী, সে সম্পর্কে সবারই একটা ধারণা থাকা দরকার।’’