গেঁওখালিতে নদীর পাড়ে বনভোজনের জায়গা। নিজস্ব চিত্র
দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন বছর। শুরু হয়ে গিয়েছে চড়ুইভাতির মরসুম। আর নদীর পাড়ে বসে চড়ুইভাতির মজাই আলাদা। আর তাই বৎসরান্তে কলকাতা-সহ বিভিন্ন এলাকা পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের গেঁওখালিতে ভিড় করেন অনেকে। কারণ কাছেই রূপনারায়ণ নদ, হলদি আর হুগলি নদীর সঙ্গম। এ ছাড়াও রয়েছে ইতিহাসের টান মহিষাদল রাজবাড়ি।
হলদিয়ার এই অঞ্চলে রয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফরের একটি পার্ক এবং মাঠ। পিকনিক করতে এসে ঘুরে বেড়ানোর উপকরণও কম নয়। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ-এর বাংলো সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে পার্ক। যেখানে করা যায় চড়ুইভাতি। তবে অবশ্যই পয়সার বিনিময়ে। অনেকে তাই নদীর তীরকেই বেছে নেন। কাছেই রাজবাড়ি, পিকনিকের খাওয়া দাওয়া সেরে অনায়াসে ঘুরে দেখে নেওয়া যায় এ সব। ফলে পিকনিকের জন্য গেঁওখালির আকর্ষণ কম নয়।
মহিষাদল ব্লকের গেঁওখালির সিংহভাগই নাটশাল-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের আওতায়। চড়ুইভাতির মরসুমে এখানে পরিবেশ দূষণ আটকাতে ইতিমধ্যেই কয়েকটি পদক্ষেপ করা হয়েছে পঞ্চায়েতের তরফে। পিকনিকের বর্জ্য ফেলার জন্য চালু করা হয়েছে দুটি ভ্যাট। প্লাস্টিক ব্যবহারে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। নদীতে আবর্জনা ফেলাও মানা। চড়ুইভাতির অভিজ্ঞতা সুন্দর করে তুলতে এবং পর্যটকদের সহযোগিতার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে ৫ জন কর্মী। যাঁদের পোশাকি নাম ‘চড়ুইভাতি বন্ধু’। তবে এখানকার মূল সমস্যা শৌচাগার। পিকনিক করতে এসে শৌচাগারের অভাবে নাজেহাল হতে হয় পর্যটকদের। একমাত্র সরকারি বাংলো ছাড়া এখানে আর শৌচাগার নেই। ফলে সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে মহিলাদের। পঞ্চায়েতের প্রধান মঞ্জরী ধাড়া মান্নার দাবি, ‘‘দূষণ রোধে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে আগামী বছর যাতে মানুষকে শৌচাগারের অভাবে নাজেহাল হতে না হয় সে জন্য বাজেট পরিকল্পনায় শৌচাগারের বিষয়টি রাখা হয়েছে। এবিষয়ে দ্রুত সদর্থক পদক্ষেপ করা হবে।’’
তবে গেঁওখালির পাশাপাশি মহিষাদল রাজবাড়ির আমবাগান সংলগ্ন এলাকাতেও ধুম পড়ে যায় পিকনিকের। তার সঙ্গে অবশ্যই রয়েছে আমোদ-প্রমোদের নানা উপকরণ। যাঁরা মাছ ধরতে ভালবাসেন তাঁদের জন্য রয়েছে টিকিট কেটে মাছ ধরার সুযোগ। মাত্র ১২০০ টাকা দিলেই মেলে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাছ ধরার অনুমতি। সুন্দর রাজবাড়ি, ফুলবাগ প্যালেস, কামান, সংগ্রহ শালা, গোপাল জিউর মন্দির, ইমামবাড়া—পিকনিক করতে এসে এ সব বাড়তি পাওনা। অথচ এখানে পিকনিক করতে আসা পর্যটকদের আভেপ, ধারে কাছে ভাল শৌচালয় নেই। নেই পরিস্রুত পানীয় ভাল জলের ব্যবস্থা। আমবাগানে পিকনিকের জন্যই আসেন অনেকেই। কিন্তু নিয়মিতি পরিষ্কারের অভাবে তা অপরিচ্ছন্ন। স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীর ভৌমিক বলেন, ‘‘প্রতি বছর এখানে দলবল নিয়ে পিকনিক করতে আসি। কিন্তু এলাকা আরও পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার। পানীয় জল ও শৌচাগারের ভাল ব্যবস্থা দরকার।’’
মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তিলক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজবাড়ির জায়গাটি পর্যটন দফতরের আওতায়। তাই আমরা চাইলেও এই জায়গায় কিছু করতে পারি না। তবে ছোলাবাড়ি মাঠে শৌচাগার রয়েছে।’’ যদিও স্থানীয়দের প্রশ্ন, মহিলা ও শিশুদের নিয়ে আমবাগান থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে শৌচালয়ে যাওয়া সম্ভব?
রাজবাড়ির সদস্য শৌর্যপ্রসাদ গর্গ বলেন, ‘‘রাজবাড়ি ‘সামার প্যালেস’ সহ প্রাচীন ভবনের সংস্কার করা হবে। হেরিটেজ ট্যুরিজম-এর উদ্যোগে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারের ব্যবস্থা হয়েছে। সেই কাজ শেষ হলে পিকনিকের জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এই রাজবাড়ি। ভবিষ্যতে সামার প্যালেসের মতো প্রাচীন ও ঐতিহ্যমণ্ডিত ভবনে রাত কাটাতেও পারবেন পর্যটকেরা।’’