শান্তনু মাইতি। নিজস্ব চিত্র
পাড়ায় একজনের বাড়িতে ছিল অনুষ্ঠান। তাই শনিবার স্কুলে যায়নি তমলুকের পদুমপুর এলাকার যোগীখোপ গ্রামের বাসিন্দা বছর দশকের শান্তনু মাইতি (১০)। বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ির কাছেই এক মাঠে বল নিয়ে খেলছিল সে। আর ওই বল কুড়িয়ে আনতে গিয়েই এ দিন ঘটল দুর্ঘটনা। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল তার।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শান্তনু যোগীখোপ গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বাবা তরুণ মাইতি পেশায় লরি চালক। এ দিন ওই এলাকার একটি বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিল। তাই স্কুলে না গিয়ে শান্তনু এবং তার কয়েকজন সঙ্গী বাড়ির অদূরে কালীমন্দির সংলগ্ন মাঠে বল খেলতে গিয়েছিল। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ খেলার সময় মাঠের পাশে থাকা ছোট খালে বল ছিটকে পড়ে। তা তুলে আনতে খালের জলে নামে শান্তনু।
শান্তনু জলে নামার সময়ে কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল তার অন্য সঙ্গীরা। হঠাৎ তারা দেখতে পায়, শান্তনু বল ধরে পাড়ে ওঠার চেষ্টা করলেও কিছুতেই উঠতে পারছে না। সে সময় কিছুটা দূরে থাকা এক যুবক ছুটে এসে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করতে গিয়ে দেখেন, খালের জলে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে রয়েছে। ওই বিদ্যুতের তারে লেগে শান্তনু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে বুঝতে পেরে উদ্ধারকারী যুবক স্থানীয় বাসিন্দাদের ডাকেন। তার পরে বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ ছিন্ন করে উদ্ধার করা হয় শান্তনুকে। তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
শান্তনুর জেঠু বিশ্বজিৎ মাইতি এ দিন বলেন, ‘‘গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হলেও ঝড় হয়নি। তা সত্ত্বেও বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে খালের জলে পড়ে রয়েছে। আর তাতেই এমন ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যুতের লাইনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই এটা হয়েছে।’’
ওই গ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েতের সদস্য শচীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মাস খানেক আগেই গ্রামে মাঠের উপর দিয়ে যাওয়া উচ্চ-ক্ষমতার (হাইটেনশন) বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছিল। স্থানীয়েরা দেখতে পেলে বিদ্যুৎ দফতরে জানানো হয়। গ্রামের নিকাশি খালের উপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের লাইনটিও অনেকদিনের পুরনো। এ দিন সকালেও বিদ্যুৎ ছিল। তবে কখন বিদ্যুৎ লাইনের দু’টি তারের মধ্যে একটি ছিঁড়ে খালে পড়েছিল, কারও নজরে আসেনি। যার জেরে এমন মর্মান্তিক ঘটনা।’’ বিদ্যুৎ লাইনের রক্ষণাবেক্ষণে দফতরের আরও নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন শচীন্দ্রনাথ।
উল্লেখ্য, পূর্ব মেদিনীপুরে হুকিংয়ের বাড়বাড়ন্তের অভিযোগ বহুবার উঠেছে। সপ্তাহ দুয়েক আগেই নন্দকুমার থানার কুমরচক গ্রামে রাস্তা পাশে কলাবাগানে পাতা কাটতে গিয়ে ছিঁড়ে পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক মহিলার। ওই ঘটনাতেও বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। অভিযোগ ছিল, বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিড়ে থাকার বিষয়টি দফতরে জানানোর কয়েকদিন পরেও তা মেরামতি করা হয়নি। যার মাসুল দিতে হয়েছে ওই মহিলাকে। আর এবার তার ছেড়ার ঘটনায় প্রাণ দিয়ে খেসারত দিতে হল ছোট্ট শান্তনুকে।
এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওনাল ম্যানেজার শ্যামল হাজরা বলেন, ‘‘ঘটনাটি নজরে আসেনি। এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। গাফিলতি রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হবে।’’