চন্দ্রকোনা ১ ব্লকে নিভৃতবাস কেন্দ্রে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের জবকার্ড দিয়ে এলেন প্রশাসনের প্রতিনিধি। নিজস্ব চিত্র
জেলায় ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৫৪ হাজার। অথচ নতুন করে জবকার্ড চেয়ে ১০ হাজার আবেদনও আসেনি।
ছবিটা পশ্চিম মেদিনীপুরের। অথচ, জেলায় ফেরার পরে ওই শ্রমিকদের রোজগারের বন্দোবস্ত করার প্রস্তুতি কম ছিল না এখানে। নজর দেওয়া হয়েছিল একশো দিনের কাজ প্রকল্পে। নতুন করে জবকার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই মতো গ্রাম পঞ্চায়েতে শিবির করে, এমনকি নিভৃতবাস কেন্দ্রে (কোয়রান্টিন সেন্টার) শিবির করেও জবকার্ড বিলি হয়েছে, এখনও হচ্ছে। অথচ দেখা যাচ্ছে, একশো দিনের প্রকল্পে মাটি কাটার কাজে আগ্রহী নন ভিন্ রাজ্য থেকে জেলায় ফেরা অনেকেই।
দেখা যাচ্ছে, জেলায় ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের ৬০ শতাংশই একশো দিনের কাজে আগ্রহী নন! পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘জেলায় ফেরা শ্রমিকদের সকলকেই একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করার কথা জানানো হচ্ছে। নতুন করে জবকার্ডও করে দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা কাজ চাইছেন, তাঁদের দেওয়া হচ্ছে। কাউকে তো জোর করতে পারি না।’’
জেলাশাসক মানছেন, ‘‘শ্রমিকদের একটা অংশ একশো দিনের কাজে ততটা আগ্রহী নন। কী করা উচিত এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না।’’ একশো দিনের কাজ প্রকল্পের জেলা আধিকারিক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘জেলায় ফেরা শ্রমিকদের সকলকে একশো দিনের কাজের নিশ্চয়তা দিতে আমরা প্রস্তুত। কাউকে তো আর কাজ করার জন্য জোর করা যায় না।’’
মেদিনীপুর সদর ব্লকের কনকাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ১১০ জন পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন। স্থানীয় উপপ্রধান বিশ্বজিৎ কর্মকার মানছেন, ‘‘ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই একশো দিনের কাজে মাটি কাটার কাজ করতে চাইছেন না।’’ সদর ব্লকেরই মণিদহ পঞ্চায়েতে প্রায় ১৬০ জন পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন। স্থানীয় উপপ্রধান অঞ্জন বেরা জানালেন, এখনও পর্যন্ত ৩০-৪০ জন মতো কাজ চেয়েছেন। তাঁদের কাজ দেওয়া হয়েছে। অঞ্জনের সংযোজন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই সোনার কাজ করতেন। তাঁরা মাটি কাটার কাজে তেমন অভ্যস্ত নন। তাই একশো দিনের কাজ করতে চাইছেন না।’’
মুম্বই ফেরত, এই এলাকার বছর বত্রিশের এক পরিযায়ী শ্রমিকও বলছেন, ‘‘অনেক দিন হল মাটি কাটার কাজ ছেড়ে দিয়েছি। আর ওই কাজ করতে পারব না। স্থানীয় কোনও সোনার দোকানে কাজ খুঁজছি। না পেলে আবার মুম্বই ফেরার কথা ভাবতে হতে পারে।’’
জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ভিন্ রাজ্য থেকে এখনও পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরে ফিরেছেন প্রায় ৬৯ হাজার জন। এর মধ্যে প্রায় ৫৪ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। দেখা একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করতে চেয়েছেন প্রায় ২২ হাজার জন। সকলকেই কাজ দেওয়া হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, জেলায় ফেরা শ্রমিকদের অনেকের পরিবারের আগে থেকেই জবকার্ড ছিল। এমন পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। পরিবারের পুরনো জবকার্ডেই সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। আর প্রায় ৮ হাজার জনের পরিবারে জবকার্ড ছিল না। এঁদের নতুন করে জবকার্ড করে দেওয়া হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকে একশো দিনের মজুরিতে উৎসাহী নন। এই প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করলে দিনে ২০২ টাকা মেলে। অথচ, ওই শ্রমিকদের অনেকেই ভিন্ রাজ্যে কাজ করে দিনে ৫০০-৬০০ টাকা রোজগার করতেন। জেলার এক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মানছেন, ‘‘অনেকেই যখন শুনছেন দিনে মজুরি ২০২ টাকা, তখন আর কাজ করতে চাইছেন না।’’
জেলা প্রশাসন অবশ্য পরিযায়ী শ্রমিকদের একশো দিনের প্রকল্পে যুক্ত করতে চেষ্টার খামতি রাখছে না। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, পরিযায়ীদের কাজ দিতে একশো দিনের ১,৩২৫টি প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে। আবেদন এলে আরও জবকার্ডও বিলি করা হবে।