সম্পদ কেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র
প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুগুলিতে ভর্তি হওয়া শারীরিক এবং মানসিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত পড়ুয়াদের চিহ্নিত করে তাঁদের পড়াশোনায় সাহায্য করতে উদ্যোগী হয়েছিল জাতীয় সর্ব শিক্ষা মিশন। এ জন্য ২০০৫-০৬ সালে মিশনের তরফে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে স্কুলগুলিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর’ নিযুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ওই ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর’ই জেলায় পর্যাপ্ত সংখ্যায় নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।
জেলার শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলগুলি নিয়ে গঠিত প্রতি চক্রে একজন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর’ চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত করা হয়েছিল। পরে ওই এডুকেটরদের সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। এডুকেটররা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদের স্কুলে গিয়ে সাহায্য করেন। পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকারাও যাতে ওই পড়ুয়াদের বিশেষ পদ্ধতিতে পড়াতে পারেন, সেই ব্যাপারে শেখান।
এছাড়া, ওই পড়ুয়াদের জন্য প্রতিটি চক্রেই একটি করে সম্পদ কেন্দ্র রয়েছে। স্পেশ্যাল এডুকেটররা ওই কেন্দ্রেও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদের সাহায্য করেন। জেলা সর্বশিক্ষা মিশন নির্ধারিত সূচি অনুসারে, প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বুধবার এডুকেটররা সম্পদ কেন্দ্রে থাকবেন। সেখানে বিশেষচাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য নথি এবং শংসাপত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করার কাজে সাহায্য করবেন। বাকি দিনগুলিতে তাঁরা যাবেন বিভিন্ন স্কুলে।
সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলিতে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়া রয়েছে। জেলার ৪৫টি চক্রে সম্পদ কেন্দ্র থাকলেও সব চক্রের জন্য স্থায়ী স্পেশ্যাল এডুকেটর নেই বলে অভিযোগ। বর্তামানে জেলায় মোট ২৩ জন স্পেশ্যাল এডুকেটর রয়েছেন। এর ফলে একজন স্পেশ্যাল এডুকেটরকে একাধিক চক্রের দ্বায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। এতে অনেক স্কুলেই এডুকেটরদের নিয়মিত যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ক্ষতি হচ্ছে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদের পড়শোনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্পেশ্যাল এডুকেটর বলেন, ‘‘প্রতিটি চক্রেই গড়ে ১৫০-২০০ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়া রয়েছে। তারা বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করে। কিন্ত একজন স্পেশ্যাল এডুকেটরকে একাধিক চক্রের দ্বায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। এতে ওই পড়ুয়াদের ঠিকমত সাহায্য করা যাচ্ছে না।’’ সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রের খবর, ২০১০ সাল থেকে নতুন স্পেশ্যাল এডুকেটর নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। ফলে বেশ কিছু শূন্যপদ পূরণ হয়নি। তার জন্যই একজন স্পেশ্যাল এডুকেটরকে একাধিক চক্রের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক অরূপকুমার ভৌমিকের দাবি, ‘‘জেলার সমস্ত চক্রেই স্থায়ী ভাবে স্পেশ্যাল এডুকেটর নিয়োগ করতে রাজ্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত।’’
সমস্যার কথা মেনে নিয়ে জেলা শিক্ষা আধিকারিক বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, ‘‘স্পেশ্যাল এডুকেটর নিয়োগ কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। তাই কিছুটা সমস্যা রয়েছে। যে সব স্পেশ্যাল এডুকেটর রয়েছেন তাঁদের বিভিন্ন চক্রের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যথাযথ দ্বায়িত্ব পালন করছেন।’’