চলছে বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র।
হাতির হানায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ক্ষুব্ধ খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে ঝাড়গ্রামে, তারপর ক’দিন আগে শিলিগুড়িতে প্রশাসনিক বৈঠকে ‘বন দফতর রেখে লাভ কী’ এমন মন্তব্যও করতে শোনা গিয়েছে বিরুক্ত মুখ্যমন্ত্রীকে।
এই পরিস্থিতিতে হাতি-সঙ্কট কাটানোর পথ খুঁজতে এ বার জেলাস্তরে বৈঠক করলেন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। দফতরের কর্তাদের নিয়ে শনিবার তিনি মেদিনীপুরে বৈঠক করেন। ছিলেন বন দফতরের প্রধান সচিব চন্দন সিংহ। হাজির ছিলেন জনপ্রতিনিধিরাও। পরে মন্ত্রী বলেন, “গত এক-দু’বছর ধরে দক্ষিণবঙ্গে হাতি নিয়ে বিরাট সমস্যা হচ্ছে। সেই সমস্যার সমাধান করতে জনপ্রতিনিধিদের মতামত নিলাম। সব মতামতই পরবর্তী সময় খতিয়ে দেখা হবে।’’
বিনয়বাবু এ দিন জানান, দক্ষিণবঙ্গে দলমা থেকে হাতি এসে আর ফিরছে না। তা ছাড়া, হাতির রুচির পরিবর্তন হচ্ছে। তাই তারা লোকালয়ে চলে আসছে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘লোকালয়ে হাতির হানা ঠেকাতে উত্তরবঙ্গ থেকে পাঁচটি কুনকি হাতি নিয়ে এসেছি। লোকালয়ে থেকে হাতি আস্তে আস্তে তাড়িয়ে ময়ূরঝর্নার দিকে নিয়ে যাব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।” একা ঘুরে বেড়ানো দলছুট হাতিগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানান বনমন্ত্রী।
বন দফতরের এক সূত্রে খবর, ২০১১-’১২ সালে পশ্চিমাঞ্চলে যেখানে হাতির হানায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে ২০১৫-’১৬ সালে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাতি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। জনপ্রতিনিধিদের একাংশ প্রস্তাব দেন, হাতি নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করে তা গ্রামাঞ্চলে দেখানো যেতে পারে। তাহলে মানুষ বুঝতে পারবেন, হাতির আচরণ ঠিক কী রকম। বনমন্ত্রীও বলেন, “হাতির বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে। এ জন্য পদক্ষেপ করা হবে।’’ স্থায়ী ভাবে ‘ফরেস্ট গার্ড’ নিয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও এ দিন জানান মন্ত্রী।
বৈঠকে ময়ূরঝর্না প্রকল্প দ্রুত শেষ করা নিয়ে আলোচনা হয়। আরও কয়েকটি এলাকায় পরিখা তৈরি নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের সব বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করা নিয়েও আলোচনা হয়। বন দফতরের এক কর্তার কথায়, “দেখা যাচ্ছে, হাতির হানায় মৃত্যুর বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটছে ভোরে কিংবা সন্ধ্যায়। শৌচকর্ম করতে গিয়ে হাতির মুখে পড়ছেন অনেকে। শৌচাগার থাকলে আর বাইরে বেরোতে হবে না।”
এ দিন মেদিনীপুরে আসার আগে নয়াগ্রামের খড়িকামাথানিতে যান বিনয়বাবু। একটি ভেষজ উদ্যান পরিদর্শন করেন।