অভিনব: এই যন্ত্র (টেবিলে রাখা) গড়েই পুরস্কার পেয়েছেন অর্ণব, কিরণ। রয়েছেন শিক্ষক দীপককুমার পাত্রও। নিজস্ব চিত্র
ট্যাঙ্কে জল শেষ হয়েছে কি না নজর রেখে পাম্প চালানোর দরকার নেই। জল কমলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতেই ফের পাম্পের মাধ্যমে ভর্তি হয়ে যাবে ট্যাঙ্ক। রান্নাঘরে গ্যাস লিক করলেও আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। কারণ সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিক করলেই মোবাইলে চলে যাবে এসএমএস। এখানেই শেষ হয়, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই এ বার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বাড়ির আলো-পাখাও। খড়্গপুরের হিজলি কলেজের দুই ছাত্র অর্ণব বাড়ুই ও কিরণ দের তৈরি করা যন্ত্রই এমন বহু সমস্যা সমাধানে পথ দেখাবে বলে দাবি।
হিজলি কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক দীপককুমার পাত্রের তত্ত্বাবধানে অর্ণব ও কিরণের গবেষণায় তৈরি করা হয়েছে ‘হোম অটোমেশন সিস্টেম’ নামে এই যন্ত্র। মোবাইল অ্যাপ দ্বারাই চালনা করা যাবে যন্ত্রটি। গত ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত রাজ্য ছাত্র-যুব বিজ্ঞান মেলায় প্রদর্শিত হয়েছিল এই যন্ত্রটি। মোট ৫৪টি কলেজের পড়ুয়ারা ওই বিজ্ঞানভিত্তিক মডেলের প্রদর্শনী প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিলেন। অর্ণব ও কিরণের তৈরি করা যন্ত্রই বিচারকদের নজর কাড়ে। শ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃতি পায় এই যন্ত্রটি। ট্রফি ও নগদ টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করা হয় অর্ণব ও কিরণকে। আগে জেলাস্তরের প্রতিযোগিতাতেও একইভাবে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন ওই দুই ছাত্র।
কীভাবে কাজ করবে এই যন্ত্র?
অর্ণব ও কিরণের দাবি, যে কোনও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে অ্যাপ দ্বারা এই যন্ত্রটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। প্রাথমিকভাবে যন্ত্রটিতে একটি ব্লু-টুথ ডিভাইস লাগানো রয়েছে। আপাতত ব্লু-টুথ দিয়েই মোবাইলের যন্ত্রটি সংযুক্ত করে চালনা করা যাবে।
যন্ত্রে মোট আটটি পয়েন্ট রয়েছে। ওই ৮টি পয়েন্টের মধ্যে ৪টি বাড়ির ইলেকট্রিক সুইচ বোর্ডের ৪টি পয়েন্টে সংযুক্ত করা যাচ্ছে। তাতে মোবাইল থেকে চারটি আলো-পাখার সুইচ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাকি চারটি পয়েন্টে রয়েছে সেন্সর। বাড়ির ট্যাঙ্কের জলস্তর শেষ হলে পাম্প চালু করা, ফুলের টবের মাটিতে জল শুকিয়ে গেলে অ্যালার্ম দেওয়া, রান্নার গ্যাস লিক হলে ফোনে এসএমএস পাঠানো ও বাড়ির বাইরের আলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কাজ করা যাবে এই চারটি সেন্সরের মাধ্যমে।
হিজলি কলেজের ওই দুই পড়ুয়ার আরও দাবি, এই যন্ত্রের মাধ্যমে সংযুক্ত করা থাকলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে অন্ধকার হলেই জ্বলে যাবে বাড়ির বাইরের আলোও। অর্ণব ও কিরণ দাবি করছেন, তাঁরা নিজেরাই এই অ্যাপ ও যন্ত্র তৈরি করেছেন। বাজারে এখন মোবাইল অ্যাপ দিয়ে আলো-পাখা নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র রয়েছে। তবে তাঁদের তৈরি করা যন্ত্রটি একসঙ্গে চারটি আলো-পাখার সুইচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সঙ্গে সেন্সরের মাধ্যমে মাটির শুষ্কতা মাপা, জলস্তর মেপে পাম্প চালু, গ্যাস লিকের এসএমএস, বাড়ির বাইরের আলো নিয়ন্ত্রণের কাজও করতে পারে করছে। এতেই তাঁদের সাফল্য। অর্ণব বলছিলেন, “এই যন্ত্রটি তৈরি করতে আমাদের মাত্র সাড়ে ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি, যন্ত্রটি বাজারে বিক্রি হলে দাম আরও কমবে।”
এই যন্ত্রেম কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। ব্লু-টুথের মাধ্যমে অ্যাপের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় যন্ত্র থেকে বেশি দূরে গিয়ে এটি চালনা করা সম্ভব নয়। অর্ণবের কথায়, “আমরা ১০-১৫ দিনে যন্ত্রটি তৈরি করেছিলাম। এখনও যন্ত্রটি নিয়ে আমরা গবেষণা চালাচ্ছি। ওয়াইফাই দিয়ে ইন্টারনেট সংযুক্ত করে বাড়ি থেকে বহু দূরে বসেও যাতে ওই যন্ত্রটি নিয়ন্ত্রণ যাতে করা যায় তার পরিকল্পনা চলছে।”
কলেজের কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষক দীপককুমার পাত্র বলছেন, “আগেও আমাদের বিভাগের পড়ুয়ারা প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ লাঠি তৈরি করেছিল, যেটি রাজ্য ছাত্র-যুব বিজ্ঞান মেলায় তৃতীয় স্থান পেয়েছিল। এ বার ফের এই যন্ত্রটি আবিষ্কার শ্রেষ্ঠ হওয়ায় আমি গর্বিত। আগামীদিনে ওদের পাশে থেকে যন্ত্রটি আরও উন্নত করার চেষ্টা করব।”