বিদ্যুতের বিল, জলকর, পুরকর— সবই আপাতত পুরনো পাঁচশো-হাজারের নোটে দেওয়া যাবে বলেই নির্দেশিকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে মেদিনীপুরে উল্টো ছবি। এখানে গত বুধবার থেকেই বাতিল নোটে পুরকর নেওয়া বন্ধ!
এই সিদ্ধান্তের জেরে দেখা দিয়েছে উভয় সঙ্কট। এক দিকে যেমন সমস্যায় পড়েছেন শহরবাসী, তেমনই সমস্যায় পড়ছে পুরসভাও। কারণ, করের টাকা জমা না পড়ছে না। ফলে, পুর-কোষাগারে টান পড়তে শুরু করেছে। এ দিকে, পুরকর বাবদ যে অর্থ আয় হয়, তা দিয়েই বিদ্যুৎ বিল মেটায় পুরসভা। পাশাপাশি, একাংশ অস্থায়ী কর্মচারীর বেতন, ফোন বিল, জরুরি সংস্কার-মেরামতের মতো কাজ করা হয়। কর বকেয়া থাকলে এই সব কাজ ব্যাহত হবে। পুরসভার এক সূত্রে খবর, শুধু হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ পুরসভার বছরে প্রায় ৮ কোটি টাকা আয় হওয়ার কথা। অর্থাৎ, মাসে প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা। একদিন কর আদায় বন্ধ থাকা মানেই প্রায় ২ লক্ষ টাকার ঘাটতি!
এত সমস্যা সত্ত্বেও কেন পুরনো টাকায় পুরকর নেওয়া হচ্ছে না? সদুত্তর এড়িয়ে মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসুর জবাব, ‘‘এখন পুরনো টাকায় পুরকর নেওয়া বন্ধ রয়েছে। আজ, মঙ্গলবার পুরসভা খুললে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’’ তবে মেদিনীপুরের এক পুর-কর্তা বলেন, “এ ক্ষেত্রে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে! আজ, মঙ্গলবার পুরসভা খুলছে। নতুন কোনও সরকারি নির্দেশ এলে সেই মতোই কাজ হবে!’’
কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা কিন্তু পুরনো নোটেই কর জমা নিচ্ছে। এমনকী মেদিনীপুরের পাশের শহর খড়্গপুরেও পুরনো টাকায় পুরকর নেওয়া হচ্ছে। সেখানেও ক্ষমতায় খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘পুরকরের ক্ষেত্রে পুরনো ৫০০, ১০০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।’’ তবে গত মঙ্গলবার পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিল ঘোষণা করার পরই ওই নোটে কর নেওয়া বন্ধ করে মেদিনীপুর পুরসভা। মেদিনীপুরের উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “সরকারি নির্দেশ সময় মতো না পৌঁছনোয় সমস্যা হয়েছে। একবার জানানো হল পুরনো ৫০০, ১০০০ টাকা অচল। ফলে, পুরসভা এই টাকা নেওয়া বন্ধ করল। পরে জানানো হল ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত নেওয়া যাবে। গত শুক্রবার বিকেলে সেই নির্দেশ যখন এল, তখন পুরসভা বন্ধ হওয়ার মুখে। শনি-রবিবার-সোম পুরসভা ছুটি ছিল।’’
এই অবস্থায় পুর-কোষাগারে টান পড়ার কথা মানছেন উপপুরপ্রধান। তিনি বলেন, ‘‘কয়েক দিন হল পুরনো টাকায় পুরকর নেওয়া বন্ধ রয়েছে। এই ক’দিনে কম করই জমা পড়েছে। কর কম জমা পড়লে তো সমস্যা হবেই।’’ এ নিয়ে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাকে বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধীরাও। শহরের কংগ্রেস কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন পুরকরের ক্ষেত্রে পুরনো টাকা নেওয়া হল না বুঝতে পারছি না! এই ক’দিনে অনেক মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। কর জমা দিতে এসেও পুরসভা থেকে ফিরে গিয়েছেন।’’