জঙ্গলমহলে পড়ে বহু নয়া রেশন কার্ড

জেলার খাদ্য নিয়ামক সুকোমল পণ্ডিতের স্বীকারোক্তি, ‘‘কিছু কার্ড এখনও বিলি করা সম্ভব হয়নি। এ বার হবে।’’ তবে তাঁর সংযোজন, ‘‘এতে জঙ্গলমহল এলাকার মানুষের রেশনে চাল-গম পেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০২
Share:

পুরনো কার্ড জমা দিয়েছেন বছর দু’য়েক আগে। এখনও খাদ্যসাথী প্রকল্পের নতুন রেশন কার্ড পাননি (ডিজিটাল)। মেদিনীপুর গ্রামীণের চাঁদড়ার কার্তিক দে বলছিলেন, ‘‘চাষবাস করে সংসার চলে। নতুন কার্ড পাইনি। তাই রেশন তুলতে পারি না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অনেকবার ব্লকে গিয়ে খোঁজখবর করেছি। কিছুই হয়নি। কার্ডটা পেলে রেশন তুলতে পারতাম। তাতে খানিক সুরাহা হত।’’

Advertisement

কার্তিকের মতো জঙ্গলমহলে এই সমস্যা আরও অনেকের। পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে ৩টি ব্লক রয়েছে। মেদিনীপুর সদর, শালবনি এবং গোয়ালতোড় (গড়বেতা- ২)। প্রশাসন সূত্রের খবর, তিনটি ব্লক মিলিয়ে এখনও ডিজিটাল রেশন কার্ড পাননি ৫৫ হাজার ৯২৬ জন।

জেলার খাদ্য নিয়ামক সুকোমল পণ্ডিতের স্বীকারোক্তি, ‘‘কিছু কার্ড এখনও বিলি করা সম্ভব হয়নি। এ বার হবে।’’ তবে তাঁর সংযোজন, ‘‘এতে জঙ্গলমহল এলাকার মানুষের রেশনে চাল-গম পেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’

Advertisement

ক্ষমতায় এসে জঙ্গলমহলের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো তিনি একের পর এক পদক্ষেপও করেন। এপিএল- বিপিএল নয়। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, জঙ্গলমহল এলাকার সব মানুষকে ২ টাকা কিলোগ্রাম দরে চাল দেওয়ার কথা। এ জন্যই চালু হয়েছে স্পেশাল বিপিএল কার্ড। এই কার্ডে মাসে মাথাপিছু ৮ কিলোগ্রাম চাল এবং ৩ কিলোগ্রাম গম মেলে। এরই মধ্যে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয়, ডিজিটাল কার্ড না হলে মিলবে না রেশন। তবে রাজ্য সরকার জানিয়ে দেয়, জঙ্গলমহলে পুরনো রেশন কার্ডে মিলবে ২ টাকা কিলোগ্রাম দরে চাল, গম। তেমনটাই চলছিল। কিন্তু নয়া ডিজিটাল কার্ডের জন্য পুরনো রেশন কার্ড জমা দিতে হয়। সমস্যা সেখানেই। যদিও সে সমস্যা এখনও জটিল হয়নি। কারণ, একটি পরিবারে অন্য সদস্যেরা রেশন পাচ্ছেন। সে পরিমাণটাও পর্যাপ্ত। তাই কোনও পরিবারের একজন যদি রেশন কার্ড না পান সে ক্ষেত্রে তাঁর খাদ্যাভাব হচ্ছে না।

কিন্তু সমস্যা ঠিক কোথায়? এপ্রিল মাস থেকে কার্ড বিলি শুরু হয়েছে। এতদিন কেন প্রায় ৫৬ হাজার কার্ড প়ড়ে রইল? প্রশাসন এক সূত্রের খবর, অনেক কার্ডে ভুলভ্রান্তি রয়েছে। তাই সেগুলি বিলি করা হয়নি। খাদ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘লাখ লাখ কার্ড বিলি হয়েছে। কিছু কার্ডে ভুল থাকতে পারে। ভুল সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।’’

প্রশাসনের সূত্রের খবর, তিন ব্লকে নতুন ওই কার্ড পাওয়ার কথা ৪ লক্ষ ৬২ হাজার ৭৯৯ জনের। এখনও পর্যন্ত পেয়েছেন ৪ লক্ষ ৬ হাজার ৮৭৩ জন। অর্থাৎ, এখনও কার্ড পাননি ৫৫ হাজার ৯২৬ জন। মেদিনীপুর সদর ব্লকে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮৭৩ জনের কার্ড পাওয়ার কথা। পেয়েছেন ১ লক্ষ ৪২ হাজার ২৭১ জন। শালবনিতে ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৭১ জনের কার্ড পাওয়ার কথা। পেয়েছেন ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৭৭৪ জন। অন্যদিকে, গোয়ালতোড়ে ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৮৫৫ জনের কার্ড পাওয়ার কথা। পেয়েছেন ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৮২৮ জন।

মুখ্যমন্ত্রী বারবার বার্তা দিচ্ছেন, উন্নয়নের সুফল দ্রুত পৌঁছে দিতে হবে। তাহলে ভুল সংশো‌ধন হচ্ছে না কেন? খাদ্য দফতরের এক সূত্রের সাফাই, কর্মীর অভাব। তাই সংশোধন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘কার্ড এসে পড়ে থাকবে, বিলি হবে না এটা হতে পারে না। জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের ১১ কিলোগ্রাম চাল-গম দিতে মা-মাটি-মানুষের সরকার বদ্ধপরিকর।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement