উজ্জ্বল দত্ত। নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে। আর সেই ঘটনার জেরে তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্তর সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, দলীয় ব্লক সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
দ্বিতীয় ইনিংসে ক্ষমতায় এসে দলের নেতাদের দাদাগিরি নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তোলা চাওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন সল্টলেকের এক কাউন্সিলর। দলের নেতাদের দাদাগিরি যে ‘প্রশাসক’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরদাস্ত করছেন না, তার ফের প্রমাণ মিলল।
জঙ্গলমহলে শাসক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ ‘ওয়াই’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বলবাবু আবার নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিও। এলাকার দাপুটে নেতা হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তাঁর। রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরে উজ্জ্বলবাবুকে প্রথমে চারজন সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী দেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীর সংখ্যা বাড়িয়ে ৭ জন করা হয়। এর মধ্যে একজন এএসআই পদ মর্যাদার অফিসারও ছিলেন। মঙ্গলবার রাতে আচমকা তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রাপ্ত এক এএসআই-সহ ৭ সশস্ত্র পুলিশ কর্মীকে তুলে নেওয়া হয়। বুধবার থেকে উজ্জ্বলবাবুকে নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়া এলাকায় ঘুরতে দেখে অবাক হয়ে যান স্থানীয় বাসিন্দারাও।
ঘটনা হল, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ভবনগুলির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের অধীনস্থ সংস্থা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশন লিমিটেড’ (এমএসসিএল)। এই নিগমের মাধ্যমে একটি বেসরকারি সংস্থার বরাতপ্রাপ্ত প্রশিক্ষিত কর্মীরা তিন বছরের চুক্তিতে হাসপাতালের লিফট, জেনারেটর, বাতানুকূল যন্ত্র-সহ পুরো ব্যবস্থা চালু রাখার কাজ করেন ও দেখভাল করেন। হাসপাতালের শৌচাগার ও ওয়ার্ড পরিষ্কার করার জন্য এমএসসিএল-এর পক্ষ থেকে আরও একটি সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছে। শাসক দলের আপত্তিতে দ্বিতীয় সংস্থাটির বহিরাগত প্রশিক্ষিত সাফাই কর্মীরা কাজে যোগ দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ। অস্থায়ী পদে স্থানীয়দের নেওয়ার দাবিতে গত সোমবার নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ ঝামেলা করেন বলে অভিযোগ। কর্মরত এমএসসিএল-এর অস্থায়ী কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ ওঠে উজ্জ্বলবাবুর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। একই ভাবে মঙ্গলবারও ওই অস্থায়ী কর্মীদের ফের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল থেকে ওই কর্মীরা কাজ বন্ধ করে দেন। হাসপাতালে অচলাবস্থা দেখা দেয়। সমস্যায় পড়েন রোগীরা।
খবর পেয়ে রাতে নয়াগ্রামে যান ঝাড়গ্রামের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনী মাঝি। নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে মঙ্গলবার রাতে কাজে ফেরেন কর্মীরা। সূত্রের খবর, গোটা ঘটনায় উজ্জ্বলবাবুর ভূমিকার কথা জেনে রীতিমতো চটে যান মুখ্যমন্ত্রী। এরপর মঙ্গলবার রাতেই উজ্জ্বলবাবুর নিরাপত্তা রক্ষী প্রত্যাহার করা হয়। তৃণমূল সূত্রের খবর, ঘটনার রাতে নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মুকে ফোন করে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের প্রশাসনিক কাজকর্মে কোনও অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ করা যাবে না। যিনি হস্তক্ষেপ করবেন, তাঁকে রেয়াত করা হবে না।
তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্তের অবশ্য দাবি করে, “হাসপাতালে কর্মী নিয়োগ নিয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করিনি। ওই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই।” নিরাপত্তা রক্ষী প্রত্যাহার প্রসঙ্গে উজ্জ্বলবাবুর দাবি, “হয়তো অন্য কোনও কারণ থাকতে পারে। এটা পুলিশের বিষয়। আমার মন্তব্য করা উচিত হবে না।”
এ প্রসঙ্গে নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু বলেন, “সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী দলীয় হস্তক্ষেপ অনুমোদন করেন না। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন।” ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি চূড়ামণি মাহাতোরও মত, “যেমন কর্ম করবেন, তেমন ফল হবে।”
ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশেই উজ্জ্বলবাবুর সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।