পাশাপাশি: চন্দ্রবাবু ও শুভেন্দু। নিজস্ব চিত্র
বুধবার লালগড় সজীব সঙ্ঘের মাঠে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুকে সঙ্গে নিয়ে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিরবাহা সরেনের সমর্থনে জনসভা করলেন শুভেন্দু। কিন্তু জঙ্গলমহলে এক সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতি মাত্র সাড়ে ৭ মিনিটেই বক্তৃতা শেষ করলেন। বাকি সময়টুকু চন্দ্রবাবুর আধঘণ্টার বক্তৃতার বাংলা তর্জমা করলেন পরিবহণমন্ত্রী। একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দেখা গেল হলদিয়ার সভাতেও। নিজের বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত করে পুরো মাঠ ছেড়ে দেওয়া চন্দ্রবাবু নায়ডুর জন্য।
শুভেন্দু যে অনুবাদকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছেন প্রথমটায় তা বোঝা যায়নি। তবে লালগড়ের সভায় দেখা যায়, চন্দ্রবাবু যখন চশমা এঁটে কয়েক পাতা বক্তৃতা খুঁটিয়ে দেখছেন, তখন তাঁর কাছে গিয়ে মনোযোগী ছাত্রের মতো নোট নিচ্ছেন পরিবহণমন্ত্রী। এ দিন চন্দ্রবাবুর ইংরেজি বক্তৃতার একেবারে কেঠো তর্জমা করেননি শুভেন্দু। বরং জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের উপযোগী করে অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার ভাবানুবাদ করে শুনিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী। সাড়ে সাত মিনিটে বক্তৃতা শেষ হয়ে যাওয়ায় কর্মী, সমর্থকেরা কিছুটা বিমর্ষ ছিলেন। কিন্তু অনুবাদেও মন কেড়ে নেন শুভেন্দু। লালগড় হোক হলদিয়া শুভেন্দুর অনুবাদের সময়ে মাঝে মাঝে উঠেছে হাততালির ঝড়। লালগড়ে তো আবার শোনা গিয়েছে স্লোগান, ‘‘জঙ্গলমহলের মুক্তিসূর্য শুভেন্দু অধিকারী জিন্দাবাদ।’’
পরিবহণমন্ত্রীর এ দিনের ভূমিকায় অনেকে মিল খুঁজে পাচ্ছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন জেলা কংগ্রেস সভাপতি স্বপন দুবের। সময়টা ২০১১। তখনও ক্ষমতা বাম সরকার। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এসেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। গড়বেতায় সভা। অনর্গল ইংরেজিতে বলে যাচ্ছেন চিদম্বরম। সভায় উপস্থিত কর্মী, সমর্থকেরা একে অপরের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছেন। বিষয়টি ঠাওর করে তৎকালীন জেলা কংগ্রেসের সভাপতি স্বপনকে অনুবাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন চিদম্বরম। স্বপনের অনুবাদ শুনে খুশি হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা। স্বপনের কথায়, ‘‘গড়বেতার সভার শেষে উনি (চিদম্বরম) বলেছিলেন, ‘বিউটিফুল ট্রানস্লেট’। ‘ ইউ আর ফাস্টার দেন মি’।’’ চিদম্বরমের হেলিকপ্টার চড়ে পরের সভা কেশপুরে গিয়েছিলেন স্বপন। সেখানেও অনুবাদকের করেছিলেন। তারপর চিদম্বরমের সঙ্গে হেলিকপ্টারে কলকাতায়। পরদিন বারাসতের একটি সভাতে চিদাম্বরমের বক্তব্য অনুবাদ করেছিলেন স্বপন। এ দিনও পরিবহণমন্ত্রী অনুবাদকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন শুনে স্বপন বললেন, ‘‘শুভেন্দুকে শুভেচ্ছা জানাই। ওকে ধন্যবাদ জানাব, বাঙালি হয়ে দক্ষিণী নেতার বক্তব্য বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে স্থানীয় মানুষের বোঝার সুবিধে করে দিয়েছেন।’’
মমতার সমর্থনে বলতে গিয়ে চন্দ্রবাবু বলেছেন, ‘‘ভারতবর্ষের মধ্যে একশো দিনের কাজ সবচেয়ে ভাল কাজ করেছে বাংলা ও অন্ধ্রপ্রদেশ। শুধু একশো দিনের কাজ নয়, বাংলার সড়ক যোজনা, বাংলা আবাস যোজনায় পাকা বাড়ি নির্মাণে পশ্চিমবঙ্গ যা কাজ করেছে ভরতবর্ষের অন্য কোনও রাজ্য সেই কাজ করতে পারেনি।’’ হলদিয়ার সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,‘‘দিদি সাত বছরে কী উন্নয়ন করেছেন, আর প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছরে কী উন্নয়ন করেছেন তা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা হোক। আমি চাই দুজনের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা হোক।’’