অনেক বুথেই ভোট হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
লিড নিয়ে সুর কিছুটা নরম তৃণমূলের। অথচ শাসকের খাসতালুক কেশপুরে ভোট পড়েছে ৮৫.২৭ শতাংশ। আর সার্বিকভাবে ঘাটাল লোকসভায় ভোটের হার ৮২.০৭ শতাংশ।
কেশপুরে মোট ভোটার এ বার ২,৫০,৪৩৫ জন। এর মধ্যে এ বার ভোট দিয়েছেন ২,১৩,৫৫৩ জন। ভোটের আগে কেশপুরের নির্বাচনী সভায় তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির ঘোষণা ছিল, ‘‘গতবার দেবের লিড ২ লক্ষ ৬০ ছিল। সেটা এ বার ৩ লক্ষের উপরে চলে যাবে। একদম নিশ্চিত থাকুন!’’ সেই অজিতই ভোটের পরে সোমবার বলছেন, ‘‘ঘাটালে আমাদের লিড আড়াই লাখ হবে।’’ কেশপুর কত লিড দেবে? তৃণমূল জেলা সভাপতির জবাব, ‘‘এক লাখ তো আসবেই।’’ দলের কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পানের সুর আরও খাদে, ‘‘লিড কত হবে সেটা ফল বেরোলে জানা যাবে।’’
নিন্দুকেরা যে বলেন, সঞ্জয় পানই কেশপুরে ভোট করিয়েছেন? আপনার কাছে ফলের পূর্বাভাস নেই? সঞ্জয়ের জবাব, ‘‘আমি তো কোনও বুথের এজেন্টও ছিলাম না।’’ পরে যোগ করলেন, ‘‘এক সময় আমরা এমন কাউকে কাউকে কর্মাধ্যক্ষ করেছিলাম, দলের পদ দিয়েছিলাম, যারা চুরি করেছে। ওদের আমরা দল থেকে তাড়িয়েও দিয়েছি। ওদের কিছু অনুগামী থেকে গিয়েছে। ফলে, লিড কত হবে নিশ্চিত করে বলা কঠিন।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ষষ্ঠ দফার ভোটে দিনভর অশান্ত ছিল কেশপুর। আর তার কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ। তাঁকে ঘিরে দফায় দফায় বিক্ষোভ হয়েছে, ‘গো ব্যাক’ স্লোগান উঠেছে, ভারতীর কনভয় লক্ষ করে দফায় দফায় ইটবৃষ্টি হয়েছে, চলেছে গুলি, রক্তও ঝরেছে। ভারতীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ জওয়ানের গুলিতে জখম হয়েছেন বক্তিয়ার খান নামে এক তৃণমূলকর্মী। তার আগে তৃণমূলকর্মীদের ছোড়া ইটের ঘায়ে মাথা ফেটেছে এক সিআইএসএফ জওয়ানের। ত্রস্ত কেশপুর জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতীকে কাঁদতেও দেখেছে রবিবার। ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে পায়ের নখ উপড়ে গিয়েছে তাঁর।
বরাবর শাসকের গড়, কেশপুরের বেশিরভাগ বুথে এ বারও শুধুমাত্র তৃণমূলের এজেন্ট ছিলেন। এ তল্লাটে জোর যার মুলুক তার। ২০০১ সালের বিধানসভা ভোটে কেশপুর থেকেই রাজ্যের মধ্যে সব থেকে বেশি লিড পেয়েছিল সিপিএম, ১ লক্ষ ৮ হাজার। সেই কেশপুরেই গত লোকসভা ভোটে তৃণমূলের লিড ছিল ১ লক্ষ ১৭ হাজার। গত বিধানসভায় তৃণমূলের লিড দাঁড়ায় ১ লক্ষ ১ হাজার। আর গত পঞ্চায়েতের নিরিখে ১ লক্ষ ৬৯ হাজার। এই পরিসংখ্যান সামনে রেখে রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা বলেন, কেশপুর বদলায়নি। বাম আমলে এন্তাজ আলিরা যে কায়দায় ভোট করাতেন, এখন সেই একই কায়দায় ভোট করান সঞ্জয় পানরা।
তাও কেন ভোটের পরে বেসুরো শোনাচ্ছে তৃণমূলকে? দলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, বুথে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। তাই না কি সব জায়গায় ‘কাজ হাসিল’ হয়নি। এক তৃণমূলকর্মীর কথায়, ‘‘কেশপুর গার্লস হাইস্কুলের বুথে ভোট দিতে গিয়েছিলাম। বাইকটা স্কুলের সামনের মাঠে রেখেছি দেখেই তেড়ে আসেন এক জওয়ান। এত কড়াকড়ি এই প্রথম!’’ সোমবার বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী অন্তরাও ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘ততটা ডুবছি না! বাকিটা ফলে বুঝতে পারবেন।’’