প্রতীকী ছবি
ভিন্ রাজ্যগুলিতে আটকে রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রায় ৪২ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে জানা যাচ্ছে, কোন রাজ্যে কত শ্রমিক আটকে রয়েছেন, তার তালিকাও তৈরি হয়েছে। ওই তালিকা রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। অন্যত্র আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের জেলায় ফেরাতে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ শুরু করেছে রাজ্য। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমলও বলছেন, ‘‘ভিন্ রাজ্যে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে পদক্ষেপ হচ্ছে।’’
জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ৫টি রাজ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের সব থেকে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক আটকে রয়েছেন। ওই রাজ্যগুলি হল যথাক্রমে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাত, তামিলনাড়ু এবং কর্নাটক। পাশাপাশি অন্ধ্রপ্রদেশ, হরিয়ানা, কেরল, পড়শি ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বিহার প্রভৃতি রাজ্যেও বেশ কিছু সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক আটকে রয়েছেন। নানা সূত্র থেকে এঁদের নাম-ঠিকানা মিলেছে। বাড়ি ফিরতে চেয়ে বহু শ্রমিক সরাসরি প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। মহারাষ্ট্রে আটকে থাকা অনেকে রয়েছেন মুম্বইয়ে। গুজরাতে আটকে থাকা অনেকে রয়েছেন আমেদাবাদে। বেশিরভাগই স্বর্ণশিল্পী।
ভিন্ রাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ীদের অনেকেই নানা সমস্যায় রয়েছেন। টাকাপয়সা ফুরিয়ে আসায় অনেকে দিনে দু’বেলা ঠিক মতো খেতে পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ। গুজরাতের আমেদাবাদে আটকে থাকা এক শ্রমিকের ক্ষোভ, ‘‘অন্য সব রাজ্যের শ্রমিকেরা একে একে বাড়ি ফিরে গেলেন। তাঁদের রাজ্য তাঁদের ফেরানোর ব্যবস্থা করল। অথচ, আমাদের নিয়ে যাওয়ার কোনও বন্দোবস্ত হচ্ছে না। দেড় মাস ধরে আটকে রয়েছি। ঠিক মতো খেতে পাচ্ছি না। রাজ্যে কাজ পাইনি বলেই তো এতদূরে কাজের জন্য এসেছি।’’ প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, এখনই মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাত থেকে শ্রমিকদের ফেরানোর খবর নেই। ওই তিন রাজ্যে করোনার সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে। তবে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে শ্রমিকেরা ফিরবেন। কাল, মঙ্গলবার খড়্গপুরে একটি শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন পৌঁছনোর কথা। তামিলনাড়ুর ভেলোর থেকে আসা ওই ট্রেনে দুই দুই মেদিনীপুর, কলকাতা, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার প্রায় ১,২০০ জনের আসার কথা। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩৩৫ জনের আসার কথা। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে স্টেশন থেকে তাঁদের বাসে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে।
প্রশাসনের এক সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, ভিন্ রাজ্যে আটকে পড়া পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের সাহায্য করতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির কাছে আগেই আবেদন করেছিল এ রাজ্যের সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে মহারাষ্ট্র-সহ কয়েকটি রাজ্যের সরকার পদক্ষেপও করেছে।
জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ভিন্ রাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের বড় অংশই ঘাটাল, দাসপুরের বাসিন্দা। আটকে থাকাদের মধ্যে রয়েছেন ঘাটালের প্রায় ২,৪০০ জন, দাসপুর- ১ ব্লকের প্রায় ২,৮০০ জন, দাসপুর- ২ ব্লকের প্রায় ৮,৮০০ জন। অন্য ব্লকের মধ্যে মোহনপুরের ৪,৬০০ জন, পিংলার ১,৮০০ জন আছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ভিন্ রাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ীদের পরিবার- পরিজনেদেরও খোঁজ রাখা হয়েছে। যাঁদের পরিবার সমস্যার মধ্যে রয়েছে, তাঁদের সাহায্য করা হয়েছে। জেলার এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘স্থানীয়স্তর থেকে ওঁদের পরিবারের খোঁজ নেওয়া হয়েছে। সহায়তা করা হয়েছে।’’