বুধবারের ব্যস্ত পাঁশকুড়া স্টেশন। দাবি, এই ব্যস্ততাই কমবে লোকাল ট্রেন বন্ধ হলে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
চলত শতাধিক লোকাল ট্রেন। এক ধাক্কায় সেই সংখ্যাটা হল শূন্য! রেল পরিবহণে কার্যত ফিরল গত বছরের লকডাউনের ছবি। তাতে চিন্তিত দক্ষিণ-পূর্ব রেলের নিত্য যাত্রী এবং পাঁশকুড়া-কোলাঘাট এলাকার ফুল ব্যবসায়ীরা।
বুধবার তৃতীয়বার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন করে আরও একবার দায়িত্ব নিয়েই তিনি প্রথমে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে উদ্যোগী হয়েছেন। যার অংশ হিসাবে রাজ্য সরকার আজ, বৃহস্পতিবার থেকে সমস্ত লোকাল ট্রেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। আচমকাই লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকার ঘোষণায় বিপাকে যাত্রীরা।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপর দিয়ে গিয়েছে দক্ষিণ- পূর্ব রেললাইন। এই জেলার পাঁশকুড়া থেকে রয়েছে দিঘা রুট। ট্রেন চলে হলদিয়া রুটেও। রেল সূত্রের খবর, করোনা পরিস্থিতির আগে দক্ষিণ-পূ্র্ব রেলের খড়্গপুর শাখায় প্রতিদিন ১৪৬টি লোকাল ট্রেন চলত। গত বছর লকডাউনে সেগুলি সব বন্ধ হয়। তবে আনলক পর্বে ১১ নভেম্বর থেকে ধীরে ধীরে ফের স্বাভাবিক হয়েছিল লোকাল ট্রেনের পরিষেবা। গত কয়েক মাসে এই শাখায় গড়ে ১৪০টি ট্রেন চলত বলে খবর। এই সব ট্রেনই আজ, বৃহস্পতিবার থেকে আর চলবে না।
জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের মধ্যে রয়েছে পাঁশকুড়া, মেচেদা, কোলাঘাট। এই স্টেশনগুলি থেকে প্রতিদিন জেলা বহু বাসিন্দা যেমন কর্মসূত্রে কলকাতায় যান, তেমনই পাঁশকুড়া এবং কোলাঘাট এলাকার ফুল ব্যবসায়ীরাও যান মল্লিক বাজারে। লোকাল ট্রেন বন্ধের সিদ্ধান্তে সমস্যায় পড়েছেন সকলে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের জেলার কয়েক হাজার শ্রমিক পার্শ্ববর্তী হাওড়া ও হুগলি জেলায় কাজ করেন। প্রতিদিন তাঁরা লোকাল ট্রেনে করে কাজের জায়গায় যাতায়াত করেন। পাঁশকুড়ার বাসিন্দা অভীক মান্না বলেন, ‘‘হাওড়ার একটি কারখানায় কাজ করি। প্রতিদিন পাঁশকুড়া থেকে লোকাল ট্রেনে কাজে যাই। সন্ধ্যায় ফিরে আসি। লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে গেলে ভরসা বাস। কিন্তু বাসও তো ৫০ শতাংশ চলবে। লোকাল ট্রেন বন্ধ না রেখে সরকার সুরক্ষা বিধির ওপর কড়াকড়ি করুক। নাহলে আমাদের না খেতে পেয়ে মারা যেতে হবে।’’
সমস্যায় ফুল ব্যবসায়ীরাও। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রায় ২৫ হাজার পরিবার ফুল চাষে যুক্ত। লোকাল ট্রেন বন্ধের ঘোষণায় বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এই মুহূর্তে গ্রীষ্মকালীন ফুলের ভরা মরসুম। লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে গেলে জেলার ফুলবাজার থেকে কলকাতার মল্লিকঘাট ফুলবাজারে ফুলে নিয়ে যাওয়া কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে বলে দাবি চাষিদের। তাঁরা বলছেন, ওড়িশায় লকডাউন চলায় বেশ কিছুদিন ধরে সে রাজ্যে ফুল পাঠানো বন্ধ রয়েছে। এখানে এবার লোকাল বন্ধ হলে ফুল কার্যত অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে থাকবে। ফুল চাষি সংগঠনের তরফে নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘ট্রেন বন্ধ হলে ফুল তো বাগানেই নষ্ট হবে।’’
অন্যদিকে, দিঘা শাখায় পাঁশকুড়া এবং মেচেদা পর্যন্ত দুটি লোকাল ট্রেন চলে। তবে গত শনিবার থেকে এই লোকালগুলিতে একেবারেই কম সংখ্যক যাত্রী হচ্ছিল। রামনগর থেকে দুটি লোকাল কার্যত ফাঁকা অবস্থায় দিঘা স্টেশনে পৌঁছচ্ছিল। এই শাখার নিত্যযাত্রী সুদীপ দাস বলছেন, ‘‘ইদানিং অর্ধেকেরও কম হয়ে গিয়েছিল যাত্রী। সম্ভবত ওই কারণেই গন পরিবহণ ব্যবস্থায় লোকসান এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ট্রেন বন্ধ করে দিল। যাতায়াতের সাময়িক সমস্যা হলেও সংক্রমণের হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা মিলবে বলে মনে হচ্ছে।’’