খুশির তরঙ্গ দুই শহরে

হাতে মোবাইল আছে। গাড়িতে রেডিও আছে। তবু এফএমের সুরে এক অর্থে বঞ্চিতই খড়্গপুরের বাসিন্দারা। শহরে কোনও এফএম স্টেশন না থাকায় কলকাতার এফএম স্টেশনের অনুষ্ঠান এখানে স্পষ্ট শোনা যায় না। আর ঝড়-বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০১:৪১
Share:

হাতে মোবাইল আছে। গাড়িতে রেডিও আছে। তবু এফএমের সুরে এক অর্থে বঞ্চিতই খড়্গপুরের বাসিন্দারা। শহরে কোনও এফএম স্টেশন না থাকায় কলকাতার এফএম স্টেশনের অনুষ্ঠান এখানে স্পষ্ট শোনা যায় না। আর ঝড়-বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই।

Advertisement

এই দুর্দিনে এ বার দাঁড়ি প়ড়তে চলেছে। কারণ, রেলশহরে এফএম স্টেশন গড়বে কেন্দ্রীয় সরকার।

মঙ্গলবার খড়্গপুরে বিজেপির ‘বিকাশ পর্ব’ নামে এক অনুষ্ঠানে এমনটাই ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌর। মালঞ্চ রোডের প্রেমহরি ভবনে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী জুয়াল ওঁরাও, বিজেপির সহ-সভাপতি অবিনাশ খান্না, রাজ্য সভাপতি তথা শহরের বিধায়ক দিলীপ ঘোষ প্রমুখ। ওই অনুষ্ঠানের আগে সকালে বিজেপির জেলা কর্মকর্তাদের নিয়ে এক বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সামনে দিলীপবাবুই জানান, বেশ কিছুদিন শহরে থেকে দেখেছেন তিনি দেখেছেন এখানে এফএম রেডিও শুনতে নানা সমস্যা হয়। তারপর ‘বিকাশ পর্বে’র অনুষ্ঠানে মন্ত্রী রাজ্যবর্ধন বলেন, “খড়্গপুরে আইআইটি রয়েছে, রেলের নামকরা জংশন স্টেশন রয়েছে। কিন্তু এখানে এফএম স্টেশন নেই শুনছি। তাই এই শহরে আমরা এফএম স্টেশন গড়ব বলে ঘোষণা করছি।’’ পরে আর এক মন্ত্রী জুয়াল ওঁরাওয়ের সংযোজন, ‘‘দিলীপদা সকালে বলছিলেন, এখানে এফএম স্টেশন নেই। তার তিন ঘন্টার মধ্যে আমাদের মন্ত্রী ঘোষণা করলেন এখানে এফএম স্টেশন হবে। এটাই আমাদের কাজের নমুনা।’’

Advertisement

প্রাথমিকভাবে বিজেপি সূত্রে খবর, ৮ মেগাহার্টজ ক্ষমতাসম্পন্ন এফএম স্টেশন গড়ে তোলা হবে খড়্গপুরে। আর তা হলে প্রায় ৭০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে এফএম স্টেশনের তরঙ্গ পৌঁছবে। এতে দুই মেদিনীপুর জেলার মানুষই পরিষেবা পাবেন। দিলীপবাবু বলেন, “আমি নিজে গাড়িতে খুব এফএম শুনি। কিন্তু খড়্গপুর ঢোকার আগে থেকেই এফএম চ্যানেলে বিঘ্ন ঘটে। আর শহরে ঢুকলে শোনাই যায় না। আবার আমার গ্রাম নয়াগ্রামে গেলে ওড়িশার স্টেশন ধরে। মন্ত্রী সব শুনে এত দ্রুত এই ঘোষণা করায় আমি আপ্লুত।’’

এফএম স্টেশনের ঘোষণায় খড়্গপুরবাসী তো বটেই খুশি ১৪ কিলোমিটার দূরে জেলার সদর শহর মেদিনীপুরের মানুষও। কারণ, এফএম প্রিয় এই দুই শহরের মানুষেরই ভরসা কলকাতার বিভিন্ন স্টেশন থেকে আসা তরঙ্গ। তাই গান শুনতে মোবাইল, আইপড, এমপিথ্রি-র চল এখানে বেশি। এফএম শোনার সুযোগ হাতের নাগালে চলে এলে দুই শহরের মানুষই উপকৃত হবেন। খড়্গপুরের রেল আধিকারিক পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার গাড়িতে এফএম আছে। কিন্তু জাতীয় সড়কে না গেলে শোনা যায় না। তাই এফএম স্টেশন চালু হলে ভাল হয়। আর শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার সংক্রান্ত তথ্য শোনানো হলে খুব ভাল হয়।’’

এফএমে নিয়মিত গান শোনেন মেদিনীপুরের সঙ্গীতশিল্পী আলোকবরণ মাইতি। কিন্তু মাঝেমধ্যে ঘড়ঘড় শব্দে গান-কথা সব অস্পষ্ট হয়ে যায়। আলোকবরণবাবুর তাই আশা, “খড়্গপুরে নতুন এফএম রেডিও স্টেশন হলে ফ্রিকোয়েন্সির সমস্যা আর হবে না।’’ একই মত মেদিনীপুর লিটল ম্যাগাজিন আকাদেমির সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠীর। তিনি জানালেন, কলকাতার দু’টি এফএম স্টেশনে সম্প্রতি তাঁদের পত্রিকা ‘জ্বলদর্চি’র নাম বলা হয়েছে। কলকাতার শুভানুধ্যায়ীদের কাছে সে কথা শুনেছেন তিনি। তবে মেদিনীপুরে বসে সেই অনুষ্ঠান কেউ শুনতে পাননি। তাই ঋত্বিকেরও ধারণা, খড়্গপুরে এফএম স্টেশন হলে সেই সমস্যা মিটবে।

এফএম-এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। নব্বইয়ের দশকে রেডিওর প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দেখা দেয় টেলিভিশন। মানুষকে টেনে বসায় ছোটপর্দার সামনে। একবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে মিডিয়াম ওয়েভের জায়গা নিতে শুরু করে ফ্রিকোয়েন্সি ওয়েভ বা এফএম। অনেক বেশি শক্তিশালী, অনেক বেশি স্পষ্ট, শ্রোতার সংখ্যাও অনেক। কারণ এফএম ধরতে রেডিওর প্রয়োজন নেই। ট্রানজিস্টর দরকার নেই। মুঠোবন্দি মোবাইলই যথেষ্ট। খড়্গপুরে এফএম স্টেশন হলে পরবর্তী সময়ে শক্তিশালী ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে এলাকা বিস্তৃত করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাস, অটো, এমনকী টোটোতেও এফএম চালানো সহজ হয়ে যাবে।

তবে শুধু বিনোদন নয়, এফএমের ব্যবসায়িক দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ।

অনুষ্ঠানের ফাঁকে এখানে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মেদিনীপুর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মলয় রায়ের মতে, “আজকের দিনে এফএমেএর জনপ্রিয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই। নিঃসন্দেহে এটা প্রচারের বড় মাধ্যমও।’’ রেলশহরের ব্যবসায়ী শ্রীনাথ সিংহেরও মত, “শহরবাসীর কাছে এফএম স্টেশন খুব জনপ্রিয় হবে। কারণ শুধু গান নয়, এখন এফএমে খবর, তথ্য, গল্প, এমনকী নিজের মনের কথাও অন্যকে জানানো যায়। এর ফলে আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা খুশি হবেন।”

দুই শহরের মানুষ এফএমের জন্য দিন গোনা শুরু করে দিলেও খড়্গপুর আইআইটির পড়ুয়াদের মধ্যে তুলনায় উৎসাহ কম। তাঁদের অনেকরই বক্তব্য, এফএম শোনার মতো সময় আইআইটির পড়ুয়াদের নেই। ইলেক্ট্রিক্যাল বিভাগের গবেষক ছাত্রী অন্বেষা সেনগুপ্ত বলেন, “আমার মনে হয় না আইআইটির ছাত্র, শিক্ষকদের মধ্যে এই এফএম স্টেশন প্রভাব ফেলবে। সব সময় তো পছন্দের গান শোনায় না। তাই ইন্টারনেট থেকে পছন্দসই গান ডাউনলোড করাই সহজ।’’ তবে অন্য মতও আছে। আইআইটির মেকানিক্যাল বিভাগের গবেষক ছাত্র অভিমন্যু কর যেমন বললেন, “এই উদ্যোগ যথেষ্ট ভাল। স্টেশন থাকলে শখে এফএম চ্যানেল শোনা যেতেই পারে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement