কেশপুর কলেজ
শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর খাওয়াদাওয়া নয়, কেশপুর কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর ছেলেদের জন্য নতুন টি-শার্টও কেনা হয়েছিল। কলেজের এক সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে ৫০টি টি-শার্ট কেনা হয়েছিল। এবং তার টাকা চেয়েও কলেজ কর্তৃপক্ষকে জোরাজুরি করেছে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ।
সাধারণত কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবস উদ্যাপন করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ, বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে ছাত্র সংসদ। কিন্তু কেশপুর কলেজে প্রথা ভেঙে ছাত্র সংসদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা দিবস পালন এবং এক দিনের সেই অনুষ্ঠানে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ব্যয় নিয়ে ইতিমধ্যে শোরগোল পড়েছে। সোমবার কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠকেও বিপুল খরচের প্রসঙ্গ ওঠে। পরিচালন সমিতির একাধিক সদস্য বুঝিয়ে দেন, এটা অনুচিত। বৈঠক শেষে পরিচালন সমিতির সভানেত্রী তথা কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহা বলেন, “এ বার থেকে পরিচালন সমিতিতে আলোচনা না করে কোনও অনুষ্ঠান হবে না, কোনও খরচও হবে না। নির্দেশিকা মেনেই সব কিছু করতে হবে।”
বিশদে কিছু বলতে চাননি কলেজের অধ্যক্ষ দীপক ভুঁইয়াও। তিনি শুধু বলেন, “অনুষ্ঠানের খরচ নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। পরে তা মিটে গিয়েছে।”
গত ২৩ মার্চ কেশপুর কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে খরচ হয়েছে ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। ছাত্র সংসদের দাবি, ওই দিন কলেজে ২,২০০ জনের খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করতে হয়েছিল। মাথাপিছু খাবারের জন্য খরচ হয়েছিল ৫০ টাকা করে। স্থানীয় শিল্পীকে দিয়ে গানের জলসা করাতে ৭২ হাজার টাকা লেগেছে বলেও তাদের দাবি। কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ সানাউল্লার কথায়, “কোন খাতে কত খরচ হয়েছে তা কলেজকে জানানো হয়েছে।”
যদিও কলেজের একাংশ শিক্ষকের মতে, এই হিসেবে প্রচুর গরমিল রয়েছে। অনুষ্ঠানের দিন ১,২০০-র বেশি পড়ুয়া কলেজে আসেনি। আর স্থানীয় শিল্পীর অনুষ্ঠানের জন্য ৭২ হাজার টাকা নেওয়াটাও খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কলেজের এক শিক্ষকের মতে, “ঠিকমতো তদন্ত হলেই বোঝা যাবে বিলে প্রচুর জল মেশানো রয়েছে।”
তবে তদন্তের কোনও সিদ্ধান্ত আপাতত কলেজ কর্তৃপক্ষ নেননি। শুধু ঠিক হয়েছে যে বিল কলেজ কর্তৃপক্ষ মিটিয়ে দিয়েছেন, তারপর আর প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য নতুন করে কোনও টাকা দেওয়া হবে না। এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা মিটিয়েছে কলেজ। যদিও টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের সাফ কথা, ‘‘বকেয়া টাকা কলেজকে দিতে হবে।”
এমন ঘটনা সমর্থন করছেন না টিএমসিপি- র শীর্ষ নেতৃত্ব। কেশপুর কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে বিপুল খরচ প্রসঙ্গে টিএমসিপি-র রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত বলেন, “বিষয়টির খোঁজখবর নিচ্ছি। বিলে যদি কোনও অসঙ্গতি থাকে, কোনও দুর্নীতির ছোঁয়া থাকে, তাহলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের নৈরাজ্য বরদাস্ত করা হবে না।” কলেজ পরিচালন সমিতির এক সদস্যেরও বক্তব্য, “ভবিষ্যতে যাতে এমনটা না হয় তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”