রাস্তা আছে, কিন্তু নাম নেই। অরণ্যশহরে ঠিকানা খুঁজতে তাই হিমসিম খেতে হয়। এখন আবার ঝাড়গ্রাম নতুন জেলার সদর শহর। তা-ও রাস্তার নাম সমস্যা ঘোচেনি।
ঝাড়গ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকাকে সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করতে বাম আমলে কয়েকটি প্রধান রাস্তার নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু শহরের দোকানপাটের সাইন বোর্ডে সেই সব রাস্তার নাম নেই। তৃণমূলের বর্তমান পুরবোর্ড বাকি রাস্তাগুলিরও নামকরণ করেনি। বাম আমলে যে সব রাস্তার নাম দেওয়া হয়েছিল, সেগুলিকে চিহ্নিত করে নাম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়নি। ফলে, পুরাতন ঝাড়গ্রাম, রঘুনাথপুর, ঘোড়াধরা, চণ্ডীপুর, কেশবডিহি, বামদা, নতুনডিহি, বাছুরডোবা, বলরামডিহি, নতুনডিহি, জামদা, শক্তিনগর, গাইঘাটার মতো এলাকায় সিংহভাগ রাস্তা অনামা। রাস্তার নাম না থাকায় পুরসভা কোনও রাস্তার সংস্কারের কাজ করলে কিংবা নদর্মা তৈরি করতে গেলে সরকারি ওয়ার্ক অর্ডারে ‘অমুক’বাবুর বাড়ি থেকে ‘তমুক’বাবুর বাড়ি পর্যন্ত অথবা অমুক দোকান থেকে তমুক দোকান পর্যন্ত রাস্তা বলে উল্লেখ করে।
২১ বর্গ কিলোমিটারের পুরশহরে ১৮টি ওয়ার্ডের জনসংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার। শহরে দোকান ও বাড়িঘরের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। ঝাড়গ্রাম শহরে পিচ, ঢালাই, মোরাম ও কাঁচা রাস্তা মিলিয়ে মোট ২২০ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। বাম আমলে মাত্র ৭২ কিলোমিটার পিচ রাস্তার নামকরণ করা হয়। সারদাপীঠ স্কুল মোড় থেকে জামদার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত প্রধান রাস্তার নামকরণ করা হয় সাঁওতালি সাহিত্যের মহাকবি সাধু রামচাঁদ মুর্মু সরণি। অলচিকি লিপির স্রষ্টা পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর নামে স্টেশন থেকে রূপছায়া মোড় ও মধুবন মোড় হয়ে পেপার মিল মোড় পর্যন্ত রাস্তাটির নামকরণ করা হয়। বংশী মোড় থেকে ছবি অ্যাপার্টমেন্ট পর্যন্ত রাস্তার নাম দেওয়া হয় সিদো-কানহো-বিরসা মুণ্ডা সরণি। আরও কিছু প্রয়াত ব্যক্তির নামে বিভিন্ন পিচ রাস্তার নামকরণ হয়। তা লেখাও হয়।
২০১৩-র নভেম্বরে তৃণমূল পুরসভায় ক্ষমতা দখলের পরে আরও ২০ কিলোমিটার পিচ রাস্তা হয়েছে। কিন্তু নামকরণ হয়নি। শহরে এই মুহূর্তে ২০ কিমি পিচরাস্তা-সহ ১৪৮ কিমি ঢালাই-মোরাম-কাঁচা রাস্তার কোনও নাম নেই। বাম আমলে শহরের বাড়িঘরের ও দোকানগুলির দেওয়ালে ওয়ার্ড নম্বর-সহ হোল্ডিং নম্বর লেখা হয়েছিল। ডি-লিমিটেশনের ফলে, ওয়ার্ডগুলির নম্বর বদলে গিয়েছে। ১ নম্বর ওয়ার্ড হয়েছে ৭ নম্বর, ৮ নম্বর ওয়ার্ড হয়েছে ১০ নম্বর। ফলে, ঠিকানা খুঁজতে হয়রান হতে হয়। একটি ক্যুরিয়র সংস্থার কর্মী সোমনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “খামের উপর প্রাপকের মোবাইল নম্বর না থাকলে ঠিকানা খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।”
প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা সিপিএম নেতা প্রদীপ সরকারের কটাক্ষ, “আমরা বাড়িঘরে হোল্ডিং নম্বর লেখা ও রাস্তার নামকরণের কাজ শুরু করেছিলাম। তৃণমূল শাসিত পুরবোর্ড গত চার বছরে কিছুই করেনি। একটা জেলাশহরের পক্ষে এটা বড়ই লজ্জার বিষয়।” পুরসভার ভাইস চেয়ারপার্সন শিউলি সিংহের অবশ্য বক্তব্য, “নতুন করে হোল্ডিং নম্বর লেখার প্রক্রিয়া চলছে। রাস্তার নামকরণ নিয়ে পুরবোর্ডে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”