খড়্গপুর

ভোটে অন্তর্ঘাত, শুনলেন মমতা

রেলশহরের পুরভোটে খারাপ ফলের পিছনে শুধু সাংগঠনিক দুর্বলতা নয়, অন্তর্ঘাতও রয়েছে বলে জেলায় এসে শুনে গিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দলেরই এক সূত্রে খবর। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রামে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠকও করেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। দলের ওই সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রামে থাকাকালীন নেত্রীর সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা হয়েছে এক পুলিশ কর্তার এবং একাধিক তৃণমূল নেতার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০১:১১
Share:

রেলশহরের পুরভোটে খারাপ ফলের পিছনে শুধু সাংগঠনিক দুর্বলতা নয়, অন্তর্ঘাতও রয়েছে বলে জেলায় এসে শুনে গিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দলেরই এক সূত্রে খবর। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রামে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠকও করেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। দলের ওই সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রামে থাকাকালীন নেত্রীর সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা হয়েছে এক পুলিশ কর্তার এবং একাধিক তৃণমূল নেতার। ওই তৃণমূল নেতারা নেত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন, অন্তর্ঘাত না- হলে রেলশহরের পুরভোটে এই ফল হত না। ওই পুলিশ কর্তার মতও না কি একই।

Advertisement

সাংগঠনিক বৈঠকে জেলা নেতাদের বিভিন্ন বিধানসভা এলাকার দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। একমাত্র খড়্গপুর সদর বাদে। খড়্গপুর নিয়ে অসন্তোষ গোপন করেননি মমতাও। জানিয়ে দিয়েছেন, এই পরিস্থিতি বেশি দিন চলতে পারে না। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলছেন, “বাকি সব এলাকার দায়িত্ব ভাগ করা হল। শুধু খড়্গপুর নিয়ে নেত্রী নীরব থাকলেন। এই তো স্পষ্ট বার্তা।’’

দলের এক সূত্রে খবর, ভোট পরবর্তী প্রাথমিক পর্যালোচনা দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন বুথের দায়িত্বে দলের তরফে যাঁদের রাখা হয়েছিল, তাঁরা সকলে নিজ নিজ দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করেননি। কেউ কেউ কংগ্রেস-বিজেপির সঙ্গে গোপনে হাতও মিলিয়েছে! খড়্গপুরে এ বার ৯টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের জামানত জব্দ হয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রদত্ত ৪,২১৪ ভোটের মধ্যে তৃণমূলের সুখদেব সাহা ৪৫৬, ১৩ নম্বরে ৪,৩৬৪ ভোটের মধ্যে তৃণমূলের সি রামনা মূর্তি ২২৮ ভোট পেয়েছেন। জেলা তৃণমূলের এক নেতার দাবি, “বুথের কর্মীরা ঠিকমতো কাজ করলে এই ফল হত না।”

Advertisement

রেলশহরে তৃণমূলের কোন্দল দীর্ঘদিনের। একদিকে দলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী অন্যদিকে প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল। দলের একাংশ নিশ্চিত, এই কোন্দলের প্রভাব পড়েছে পুরভোটেও। খারাপ ফলের পরই দেবাশিসবাবুর নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার করা হয়েছে। তা নিয়েও জল্পনার শেষ নেই। জেলা তৃণমূলের ওই নেতাও মানছেন, “খড়্গপুরে এ বার চতুর্মুখী লড়াই হয়েছে। প্রাপ্ত আসন ১১টি হবে, এটা বুঝতে পারিনি!”

জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের দাবি, “দলের ফল খারাপ হয়নি।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, একক দল হিসেবে তৃণমূলই সবথেকে বেশি ভোট পেয়েছে। তৃণমূলের পর কংগ্রেস। বিজেপি তিন নম্বরে। বস্তুত, রেলশহরের পুরভোটে তৃণমূল ২৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। কংগ্রেস ২৭, বিজেপি ২১ এবং বামেরা ১৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে মেদিনীপুরে এক সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল নেতৃত্ব জানায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন। উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্‌ ঘোষ, নির্মল ঘোষ, শ্যামপদ পাত্র, ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলুই প্রমুখ। শ্যামপদবাবুকে এ বার দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি করেছেন মুখ্যমন্ত্রীই। ঘাটাল মহকুমার কাজকর্ম দেখভাল করবেন প্রদ্যোত্‌ ঘোষ। সঙ্গে থাকবেন শ্যামপদ পাত্র, শঙ্কর দোলুই, সুনীল ভৌমিক। দলের আরেক কার্যকরী সভাপতি আশিস চক্রবর্তী কেশপুর, গড়বেতা, চন্দ্রকোনার কাজকর্ম দেখভাল করবেন। নির্মল ঘোষ পেয়েছেন কেশিয়াড়ি, দাঁতন, মোহনপুরের দায়িত্ব। ঝাড়গ্রাম মহকুমার কাজকর্ম দেখভাল করবেন আইএনটিটিইউসির রাজ্য নেতা প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে থাকবেন সুকুমার হাঁসদা, দুর্গেশ মল্লদেব, চূড়ামণি মাহাতো, দুলাল মুর্মু, বনবিহারী রায়। অন্য দিকে, খড়্গপুর- ১ এবং ২, সবং, পিংলার দায়িত্ব পেয়েছেন আর এক জেলা কার্যকরী সভাপতি অজিত মাইতি। মেদিনীপুর শহর, ডেবরা, শালবনির কাজকর্ম দেখবেন বিধায়ক মৃগেন মাইতি। শালবনির ক্ষেত্রে তাঁকে সহযোগিতা করবেন বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো। মেদিনীপুর শহরে সহযোগিতা করবেন প্রণব বসু। দলের একাংশের মতে, এ ভাবে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়ে আসলে জেলা সভাপতির ক্ষমতাই খর্ব করা হল। অন্য অংশের দাবি, বিধানসভা নির্বাচনকে ‘পাখির চোখ’ করেই নেত্রীর এই সিদ্ধান্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement