তমলুকের একটি নার্সারিতে তৈরি হচ্ছে ভেটিভারের চারা। নিজস্ব চিত্র।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে জলোচ্ছ্বাসে সমুদ্র উপকূলে ও নদীর তীরবর্তী এলাকায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। সুন্দরবন এলাকাতেও বিভিন্ন নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বিপর্যয়ের পর সুন্দরবন ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবন ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সমুদ্র ও নদীবাঁধ রক্ষায় ম্যানগ্রোভ চারা লাগানো সহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষতিগ্রস্ত নদীবাঁধগুলির মেরামতির পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী ভাবে বাঁধ রক্ষার উপর জোর দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর ওই পরামর্শের পরে তৎপর হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন ও সেচ দফতর। জেলার রূপনারায়ণ, হুগলি, হলদি, কেলেঘাই সহ বিভিন্ন নদীর বাঁধ রক্ষায় ভুমিক্ষয় রোধে উপযোগী ‘ভেটিভার’ ঘাসের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের অধীনে সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের (সিএডিসি) তমলুক শাখা, স্বসহায়ক গোষ্ঠী সদস্যদের সহায়তায় চলতি বছরে প্রায় ২০ লক্ষ ‘ভেটিভার’ ঘাসের চারা তৈরি শুরু করেছে। পর্ষদের উদ্যোগে তমলুকের নিমতৌড়িতে জেলা প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন একটি নার্সারিতে ১০ লক্ষ এবং খেজুরির ইড়িঞ্চিতে পর্ষদের নার্সারিতে ১০ লক্ষ ‘ভেটিভার’ চারা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগে।
পর্ষদের তমলুক শাখার প্রকল্প আধিকারিক উত্তম লাহা জানান, ভূমিক্ষয় রোধে ভেটিভার ঘাস খুবই উপযোগী। পরিণত ভেটিভার ঘাসের শিকড় ১৫-২০ ফুট লম্বা ও স্প্রিং-এর মতো প্যাঁচানো হয়। ফলে তাতে মাটি ধরে রক্ষার ক্ষমতা থাকে। একবার এই ঘাসের চারা লাগালে তা বেশ কয়েক বছর জীবিত থাকে। জোয়ারের জলের ধাক্কায় বাঁধের মাটি ক্ষয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। সে জন্য নদীর বাঁধ রক্ষার কাজে ভেটিভারের ব্যবহার বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘‘জেলায় বছর পাঁচেক আগে ভেটিভার ঘাসের চারা তৈরি শুরু হয়েছে। বছর দু’য়েক আগে পটাশপুরের কেলেঘাই ও মহিষাদল ব্লকের ইটামগরা এলাকায় হলদি নদীর বাঁধ রক্ষায় ভেটিভার ঘাস লাগানো শুরু হয়েছিল। তাতে ভাল ফল মিলেছে।’’ তবে নোনা মাটিতে ভেটিভার ঘাসের চারা বাঁচে না। তাই সমুদ্র বাঁধের ক্ষেত্রে নোনা মাটির জন্য ভেটিভারের ব্যবহার হয় না বলে জানালেন উত্তমবাবু।
প্রশাসনিক ও পর্ষদ সূত্রের খবর, চলতি বছর প্রথমে মোট ১০ লক্ষ ভেটিভার ঘাসের চারা তৈরির লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি ইয়াসের জেরে জেলার বিভিন্ন নদী বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীবাঁধ রক্ষায় ভেটিভারের ব্যবহার বাড়াতে মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দেওয়ার পরে জেলার বিভিন্ন নদীবাঁধ রক্ষায় ভেটিভার ঘাসের ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সেজন্য বর্তমানে ২০ লক্ষ ভেটিভার ঘাসের চারা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। পর্ষদের প্রকল্প আধিকারিক বলেন, ‘‘ভেটিভার ঘাসের একটি চারা থেকে প্রায় ২০টি গুচ্ছ তৈরি হয়। এভাবে ভেটিভার চারা তৈরির দুটি নার্সারিতে কাজ শুরু করা হয়েছে। এর জন্য ৪০টি স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর প্রত্যককে ৫০ হাজার করে ভেটিভার চারা তৈরির কাজ দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে ওই ভেটিভার ঘাসের চারা তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেচ দফতর ও পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ওই ভেটিভার ঘাসের চারা নদীবাঁধে লাগানো হবে।’’