অদম্য: ভাঙা কোমরে বসতেও কষ্ট। সেই যন্ত্রণা সয়েই হাসপাতালের শয্যায় পরীক্ষা দেওয়া। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
অদম্য জেদ আর নিজের পায়ের দাঁড়ানোর স্বপ্ন— এই দুইয়ের জোরেই মাধ্যমিক দিচ্ছে সুমিত সামন্ত। ঘাটালের মনসুকা লক্ষ্মীনারায়ণ হাইস্কুলের এই ছাত্রের পরীক্ষাকেন্দ্র ঘাটাল বিদ্যাসাগর হাইস্কুল। কিন্তু সেখানে যাওয়ার জো নেই বছর ষোলোর সুমিতের। সে পরীক্ষা দিচ্ছে ঘাটাল হাসপাতালে শয্যায় শুয়ে।
তিন মাস আগে ঘুড়ি ওড়াতে ছাদে উঠেছিল ডানপিটে সুমিত। তখনই পড়ে কোমর ভাঙে। দীর্ঘদিন হাসপাতালে কাটিয়েও উঠে দাঁড়ানোর শক্তি হয়নি। মেরুদণ্ডের নীচের অংশের হাড় ভেঙে যাওয়ায় সে বসতেও পারে না। কিন্তু মাধ্যমিক দেওয়ার ক্ষেত্রে সে সব বাধা হয়নি। পরীক্ষা শুরুর দিন কয়েক আগে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে যতটুকু পড়াশোনা হয়েছে, তার ভরসায় আর জেদের জোরেই পরীক্ষা কেন্দ্রে চলে এসেছে সুমিত।
সোমবার পরীক্ষার প্রথম দিনে ঘাটাল হাসপাতালে শয্যাতেই পরীক্ষা দিয়েছে এই ছাত্র। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত পালের কথায়, “রাইটারের সাহায্য ছাড়াই পরীক্ষা দিয়েছে সুমিত। ব্যথায় কঁকিয়ে উঠেছে। তবুও শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়েছে। ওর জেদ দেখে আমরাও অবাক।’’ হাসপাতাল সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায়-সহ চিকিৎসক, নার্সরা তার খোঁজ নিয়েছেন। সুমিতের মা অমৃতা সামন্ত বলেন, “আশা করিনি পুরো সময় পরীক্ষা দিতে পারবে। ছেলের মনের জোর দেখে আমরাও লড়াই করার তাগিদ পাচ্ছি।’’ সুমিতকে লড়তে হয়েছে আর্থিক অনটনের সঙ্গেও। ঘাটাল শহরের চাউলি-সিংহপুরে বাড়ি সুমিতের। বাবা সুকুমার সামন্ত প্রতিবন্ধী। সোজা ভাবে দাঁড়াতে পারেন না। কোমরে সমস্যা। মা অমৃতা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে সংসার চালান। দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সুমিতের চিকিৎসায় প্রচুর ধারদেনা হয়েছে। কঠিন হয়েছে লড়াই।
লড়াই জিততে প্রস্তুত সুমিতও। তার কথায়, “পরীক্ষা মনের মতো হয়নি। খুব কষ্ট হয়েছে। তবু হাল ছাড়িনি।’’