জামিনে মুক্ত আনিসুর, দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে

গত ৩০ জানুয়ারি কাঁথিতে অমিত শাহের সভার দিন গোলমালে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিমানবন্দর থেকে আনিসুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০২:৫৪
Share:

পাঁশকুড়ায় ফিরলে আনিসুরকে নিয়ে উল্লাস অনুগামীদের।

ভোটের আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন। প্রায় চার মাস জেলে থাকার পরে বুধবার জামিনে মুক্ত হয়ে বৃহস্পতিবার পাঁশকুড়ায় পা রাখলেন তিনি। ফুলের মালা পরিয়ে তাঁকে ঘিরে বিশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়। কিন্তু তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা পাঁশকুড়ার বাসিন্দা আনিসুর রহমানের ওই মিছিলে দেখা গেল না স্থানীয় বিজেপি নেতাদের। তাদের তরফে গেল না শুভেচ্ছা বার্তাও। ফলে আনিসুরের সঙ্গে বিজেপির স্থানীয় নেতাদের বিরোধ ফের একবার সামনে এল। যদিও পাঁশকুড়া বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, দলের নির্দেশ না থাকায় তাঁরা মিছিলে যাননি।

Advertisement

গত ৩০ জানুয়ারি কাঁথিতে অমিত শাহের সভার দিন গোলমালে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিমানবন্দর থেকে আনিসুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ডেবরায় আদিবাসী তরুণীকে ধর্ষণ, কাঁথির এক তৃণমূলকে কর্মীর খুনের ঘটনায় নাম জড়ায় আনিসুরের। আনিসুরের দাবি, সবক’টি মামলাতেই তিনি জামিন পেয়েছেন।

বুধবার সন্ধ্যায় আনিসুরের জামিনে মুক্তির খবর আসতেই তাঁকে মেদিনীপুর জেল থেকে আনার প্রস্তুতি শুরু হয়। এ দিন সকালে পাঁশকুড়া থেকে শতাধিক আনিসুর অনুগামী ২০টি গাড়ি নিয়ে মেদিনীপুরে যায়। জেল থেকে বেরোনোর পর হুড খোলা গাড়িতে রোড শো করেন আনিসুর। বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সহ- সভাপতি শিবু পানিগ্রাহী বলেন, ‘‘মিথ্যা মামলায় আনিসুরকে গ্রেফতার করেছিল। তাই আমরা ওকে বরণ করেছি।’’ পরে পাঁশকুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন আনিসুর। পথে ডেবরায় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের হাত থেকে পরেন ফুলের মালা।

Advertisement

দুপুর সওয়া ১ টা নাগাদ পাঁশকুড়ায় পৌঁছন আনিসুর। পাঁশকুড়া পুরাতন বাজার এলাকায় আগে থেকেই জড়ো হয়েছিলেন বেশ কিছু বিজেপি কর্মী-সমর্থক। আনিসুর গাড়ি থেকে নামতেই তাঁকে কাঁধে তুলে নিয়ে শুরু হয় পদযাত্রা। রাস্তায় পাঁশকুড়া থানা সংলগ্ন শহিদ বেদিতে মালা দিয়ে মাটিতে প্রণাম করেন আনিসুর। মেয়ে আনিসা হাবিবকে জড়িয়ে তাঁকে কাঁদতেও দেখা যায় সে সময়। পুরাতন বাজার থেকে বাজনা-সহ পদযাত্রা করে পাঁশকুড়া পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে নিজের বাড়িতে আসেন আনিসুর।

তবে এ দিন মিছিলে অবশ্য শোনা যায়নি ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। দেখা মেলেনি পাঁশকুড়ার বিরোধী নেতা তথা বিজেপির যুব মোর্চার রাজ্য কমিটির সিন্টু সেনাপতি বা তাঁর অনুগামীদের। অথচ এই সিন্টুই লোকসভায় পাঁশকুড়ায় বিজেপির প্রচার অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। দলীয় প্রার্থী ভারতী ঘোষের সঙ্গে এলাকায় ঘুরেছেন। আনিসুরের মিছিলে না থাকা নিয়ে সিন্টু বলেন, ‘‘দলের কোনও নির্দেশ ছিল না। তাই যাইনি।’’ উল্লেখ্য, পাঁশকুড়ায় আনিসুর ও সিন্টুর অনুগামীদের বিবাদ দীর্ঘদিনের। এই পরিস্থিতিতে পাঁশকুড়ায় আনিসুর দলে কতটা গুরুত্ব পাবেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি কর্মীদের একাংশ। দলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস অবশ্য বলেন, ‘‘আনিসুর জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, ভাল কথা। মানুষ এখন বিজেপির ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেছে। দলের নিয়ম মেনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রত্যেককে কাজ করতে হবে।’’

সাংবাদিকদের সামনে এ দিন ক্ষোভ উগরে দিয়ে আনিসুর বলেন, ‘‘বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য শুভেন্দু অধিকারীর চক্রান্তে আমাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। শুভেন্দুবাবুকে আমি দাদা হিসাবে আজও শ্রদ্ধা করি। ওঁকে বলব, পুলিশ বাদ দিয়ে মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করুন।’’

যদিও আনিসুরের জেলযাত্রায় কোনও চক্রান্ত হয়নি বলে দাবি তৃণমূলের। দলের পাঁশকুড়া ব্লক সভাপতি দীপ্তিকুমার জানা বলেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে যা হয়েছে, পুরোটাই আইনের ব্যাপার। এতে দলের কোনও বক্তব্য নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement