পুরসভাগুলিকে স্বাবলম্বী করার কথা বারবারই বলছে রাজ্য সরকার। আয় বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রাপূরণে জোর দেওয়া হচ্ছে। অথচ ঘাটাল-সহ মহকুমার পাঁচটি পুরসভার এ নিয়ে কোনও হেলদোল নেই। পুর-আয়ের একটা বড় অংশের অপচয় হচ্ছে বলেও অভিযোগ। শহরের যথাযথ উন্নয়ন না হওয়ায় বাসিন্দাদের ক্ষোভ বাড়ছে।
আয়তন ও জনসংখ্যার অনুপাতে এক একটি পুরসভার আয় এক এক রকম। যেমন, ঘাটাল পুরসভা বছরে প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ থেকে ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা আয় করে। চন্দ্রকোনা পুরসভার আয় ৭৫-৮০ লক্ষ টাকা। আর ক্ষীরপাই, খড়ার, রামজীবনপুর পুরসভা গড়ে ৪০-৪৫ লক্ষ টাকা আয় করে। পুরসভাগুলির দাবি, মোট আয়ের সিংহভাগ টাকাই চলে যায় বিদ্যুতের বিল মেটানো এবং সাফাই কর্মী-সহ অস্থায়ী কর্মীদের বেতন দিতে। তা ছাড়া, রাস্তা সংস্কার, আগাছা পরিষ্কারের মতো কাজও করতে হয় পুরসভাগুলিকে। ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষের কথায়, “পুরসভা চালাতেই তো হিমসিম খাচ্ছি। নিজস্ব তহবিলের টাকায় কি আর উন্নয়ন করব!” কমবেশি একই সুর খড়ার, রামজীবনপুর, ক্ষীরপাই ও চন্দ্রকোনার পুরপ্রধানদের গলায়।
বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, এক দিকে পুরসভাগুলি আয় বাড়াতে সচেষ্ট হচ্ছে না, অন্য দিকে পুরসভার নিজস্ব তহবিলের আয়ের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ টাকা পুর-কর্তৃপক্ষের একাংশ নয়ছয় করছেন। বাৎসরিক বাজেটে পুরসভার নিজস্ব তহবিলের টাকায় উন্নয়নের কোনও তথ্যেরও উল্লেখ থাকছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘাটালের এক কাউন্সিলরের কথায়, “উন্নয়নের নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকার ভুয়ো বিল তৈরি হচ্ছে। পুর দফতর একটু নজরদারি চালালেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।” ঘাটালের সিপিএম নেতা অশোক সাঁতরারও অভিযোগ, “নজরদারির ফাঁকে লক্ষ লক্ষ টাকা বেহাত হয়ে যাচ্ছে।”
বাম আমলেই পুরসভাগুলিকে আয় বাড়িয়ে স্বনির্ভর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। বর্তমান শাসক দলের অবস্থানও কিছু আলাদা নয়। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম লিখিতভাবে আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে জোর দিতে বলেছেন সব পুরসভাকেই।
আয় বাড়ানোর বেশ কিছু ক্ষেত্রও রয়েছে মফস্সলের পুরসভাগুলির। যেমন, প্রত্যেক পুরসভার হাতেই ফাঁকা জমি রয়েছে। সেখানে অডিটেরিয়াম, পার্ক, টাউন হল বা সুইমিং পুল তৈরি করে রোজগার বাড়ানো যায়। বড়সড় মার্কেট কমপ্লেক্স গড়েও আয় বাড়াতে পারে পুরসভা। তা ছাড়া, বাড়ি তৈরির নকশা অনুমোদন, বসতবাড়ি ও দোকানের কর, মিউটেশন ফি, ট্রেড লাইসেন্স-সহ নানা খাতে পুরসভার আয় হয়। পুর এলাকায় বেসরকারি বা সরকারি সংস্থার বিজ্ঞাপন, মেলা, উৎসব আয়োজনের জন্যও আয় হয়।
ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি পুরসভার প্রতিটিরই বয়স একশোর বেশি। পুর-প্রশাসন সূত্রের খবর, পুরসভার উন্নয়নে রাজ্য সরকার টাকা বরাদ্দ করে। সম্প্রতি কেন্দ্রায় সরকারও বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে। এর বাইরে পুরসভাগুলি আয়ের ক্ষেত্র প্রসারিত করতে উদ্যোগী হলে উন্নয়ন তরান্বিত হবে বলেই সকলের আশা। ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন পুরসভাগুলি কবে সেই মতো তৎপর হয়, সেজে ওঠে শহর— সে দিকেই তাকিয়ে পুর এলাকার বাসিন্দারা।