জলকাদা পেরিয়ে দেহ নিয়ে পাড়ি দিতে হল কয়েক কিলোমিটার পথ। —নিজস্ব চিত্র।
আশপাশে শুকনো জায়গা নেই। যেখানে চোখ যায়, শুধু জল আর জল। এমতাবস্থায় দেহ সৎকার করতে জল পেরিয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে শ্মশানযাত্রীদের যেতে হল দূরের একটি শ্মশানে। বানভাসি ঘাটালের দুর্দশার আর এক ছবি উঠে এল মঙ্গলবার।
অক্টোবরের টানা বৃষ্টিতে ঘাটাল-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু কিছু জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। চাষের জমি, রাস্তা থেকে সেই জল নামতে না নামতেই গত শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’র প্রভাবে আবার বৃষ্টি হয়েছে। তাতে আবারও জলমগ্ন ঘাটাল পুর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড। শিলাবতী নদীর জল বেড়ে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘাটাল পুরসভার বাসিন্দাদের এখন যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ডিঙি এবং নৌকা। ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রাজ্য সড়কের আরগোড়া চাতাল এলাকায় উঠেছে বন্যার জল। জল ঢুকে পড়েছে স্কুলেও।
এই পরিস্থিতির মধ্যে ঘাটালের আচার্যপল্লি এলাকায় দেখা গেল জলযন্ত্রণার অন্য এক ছবি। স্থানীয় সূত্রে খবর, আচার্যপল্লির বাসিন্দা কিরীটিরঞ্জন আচার্য নামে এক বৃদ্ধ মারা যান সোমবার রাতে। মঙ্গলবার তাঁর দেহ সৎকারের তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু শ্মশানঘাটও তো জলে ভাসছে। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবরের পর আচার্যপল্লির বাসিন্দারা বৃদ্ধের দেহ নিয়ে হাঁটা দেন কয়েক কিলোমিটার। জলকাদা পেরিয়ে সেখানে যেতে গিয়ে কার্যত বেগ পেতে হল শ্মশানযাত্রীদের। মৃতের পরিবারের এক সদস্যের কথায়, ‘‘জলবন্দি থাকার যন্ত্রণা কী, আজ আরও ভাল করে মালুম হল। যেখানে দেহ সৎকার করা হয়, সেখানে পৌঁছনো আমাদের কাছে কার্যত অসম্ভব ছিল। তাই জল পেরিয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে দেহ নিয়ে যেতে হল দূরের একটি শ্মশানে।’’
কালীপুজোর আগে আবার ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পুজো উদ্যোক্তাদেরও। বেশ কয়েকটি জায়গায় এ বছর পুজো বন্ধ থাকতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এ নিয়ে চলতি বছরে পাঁচ বছরে বন্যা হল। যদিও এ বিষয়ে ঘাটাল মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস বলেন, ‘‘বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মানুষজন কষ্টে আছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছি আমরা।’’