এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াতে ভয় পাচ্ছেন এলাকার মানুষ।
সন্ধ্যা নামলেই জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে গোটা রাস্তা। জরুরি দরকার না থাকলে শেয়াল, কুকুর ছাড়া এ পথে আসে না কেউই। কারণ ছিনতাইবাজের আতঙ্ক। যাদের হাতে থেকে রেহাই পায় না রোগীর গাড়িও। ছিনতাইকারীদের ভয়ে অসুস্থ রোগীর গাড়ি সঙ্গে দলবেঁধে থাকেন গ্রামের যুবকেরা। দিনের পর দিন এ ভাবেই চলছে ওই রাস্তা সংলগ্ন তিন গ্রামের মানুষের পথচলা।
পটাশপুর-১ ব্লকের নৈপুর পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর সংযোগকারী গ্রামীণ সড়ক। রাস্তার একদিকে নৈপুর লক্ষ্মীবাজার থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের সাউরি রাজ্য সড়কে যুক্ত হয়েছে। বেলদা স্টেশন-সহ ওড়িশা যাওয়ার সহজ উপায় হওয়ায় ব্যবসার কাজে পটাশপুর ও ভগবানপুর এলাকার বহু মানুষ এবং ব্যবসায়ী এই রাস্তা ব্যবহার করেন। কিন্তু দিনের বেলায় ফাঁকা রাস্তায় বটেই সন্ধ্যা নামতে না নামতেই ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য লাগাম ছাড়িয়েছে ওই রাস্তায়। তাই সন্ধ্যার পরে এ পথ মাড়াতে চান না কেউই।
অভিযোগ, গত শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ পটাশপুর দইতলা বাজারের এক ব্যবসায়ী বেলদা থেকে ছোট লরিতে মালপত্র নিয়ে লক্ষ্মীবাজার-সাউরি রাস্তা ধরে পটাশপুরের দিকে আসছিলেন। মির্জাপুর মোড়ের (হরিদাসপুর) কাছে ছিনতাইবাজরা গাড়ি আটকালে পালিয়ে যান গাড়ির চালক। গাড়িতে থাকা এক যুবক পালাতে গেলে দুষ্কৃতীরা তাকে ধরে লোহার রড ও কাটারি নিয়ে তার উপর হামলা করে। যুবকরে চিৎকারে পাশের গ্রাম থেকে লোকজন ছুটে এলে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসেও এই রাস্তায় মির্জাপুর মোড়, পদিমা, স্যাঁঙায় চারটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে দুষ্কৃতীরা। গাড়ি আটকে আরোহীদের কাছ থেকে টাকা পয়সা-সহ মোবাইল এবং সোনার গয়না ছিনতাই করে দুষ্কৃতীরা। শুধু ছিনতাই করেই ক্ষান্ত থাকছে না দুষ্কৃতীরা। অনেক সময় মারধরও করছে তারা। ফলে সন্ধ্যা নামলেই দুষ্কৃতীদের আতঙ্কে তড়িঘড়ি সব কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে মির্জাপুর, স্যাঁঙা, চকগোপাল, বেলদা-সহ একাধিক গ্রামের মানুষকে। এর জেরে লোকজন না থাকায় স্থানীয় লক্ষ্মীবাজারে সন্ধ্যা সাতটা বাজলে দোকান পাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ের হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, পরিবারের লোকজন কাজে বাইরে বেরোলে ঘরে না ফেরা পর্যন্ত আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ধান কাটা শুরু হতেই এলাকায় গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়তে থাকে। মাঠে ধান রোপণ হয়ে গেলে কিছুটা দৌরাত্ম্য কমে। পুলিশের দাবি, একাধিক ছিনতাই এবং মারধরের ঘটনায় হলেও কোনও ব্যাক্তি থানায় তা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেননি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের এক জন বলেন, ‘‘ছিনতাইকারীরা একাধিক দলে ভাগ হয়ে রাস্তার ধারে ঝোপে লুকিয়ে থাকে। একাধিক বার আমাকে দুষ্কৃতীরা মারধর করে টাকাপয়সা ছিনতাই করেছে। মারের চোটে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত হতে হয়েছে। তাই এখন সন্ধ্যা নামার আগেই দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে আসি।’’ বছর চারেক আগে এই এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় একাধিক গ্রামের মানুষ দলবদ্ধ হয়ে ছিনতাইকারীদের ধরে গণপ্রহার করে। তাতে তিন জনের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় পুলিশ গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশি হয়রানির ভয়ে তাই এখন কেউ পুলিশকে সহযোগিতা করে না বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। এলাকার মানুষের অভিযোগ, পুলিশ সব জেনেও চুপচাপ বসে রয়েছে। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে এলাকায় পুলিশি টহলদারি ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে সেখানে রাতভর পুলিশ মোতায়েন রাখতে হবে।
এবিষয়ে কানাই দাস নামে এক ব্যক্তি জানান, পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হলে মানুষের আতঙ্ক কিছুটা কমবে। কারণ সন্ধ্যা নামলেই ভয়ে মানুষ বাইরে বেরোতে চাইছেন না। রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ারও সমস্যা হচ্ছে।’’ পটাশপুর থানার ওসি রাজকুমার দেবনাথ বলেন, ‘‘ঘটনার পরে এলাকার সারা রাত পুলিশের টহলদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।’’