নালিশ পঞ্চায়েত সহায়কের

প্রধান-উপপ্রধানের পরিজনেরা বাড়ি পাচ্ছেন একাধিক প্রকল্পে

গরিব মানুষের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রকল্পে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠল তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। প্রকল্পের টাকা পেয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী ও শাশুড়ি দু’জনেই। উপপ্রধান ও অন্য পঞ্চায়েত সদস্যদের ক্ষেত্রেও একই পরিবারের একাধিক সদস্য বিভিন্ন প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছেন।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০১:০১
Share:

গরিব মানুষের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রকল্পে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠল তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। প্রকল্পের টাকা পেয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী ও শাশুড়ি দু’জনেই। উপপ্রধান ও অন্য পঞ্চায়েত সদস্যদের ক্ষেত্রেও একই পরিবারের একাধিক সদস্য বিভিন্ন প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছেন।

Advertisement

সরকারি নিয়ম ভেঙে এই কার্যকলাপ চলছে বলে লালগড়ের ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক সুদীপ গিরি। সে জন্য সুদীপবাবুকে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। একে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তায় সুদীপবাবু তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের লালগড় ব্লক কমিটির সদস্য। স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়েছেন লালগড় ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। আজ, শনিবার প্রধান-সহ দলের সাত পঞ্চায়েত সদস্যকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায়। তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায় বলেন, “উন্নয়নের প্রাপক তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে দলের কোনও ভূমিকা নেই। আজ, শনিবার সমস্যা মেটানোর জন্য প্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে লালগড়ে বৈঠক করব।”

সুদীপবাবু প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “আমি বিভাগীয় আধিকারিকের কাছে অভিযোগ করেছি। সংগঠনকেও জানিয়েছি। তবে সংবাদ মাধ্যমে কিছু বলব না।” পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের ঝাড়গ্রাম মহকুমা নেতা নান্টুলাল দাস অবশ্য বলেন, “প্রধানের অনৈতিক কাজকর্মের প্রতিবাদ করায় সুদীপবাবুকে মারধর করা হয়। ঘটনাটি নিন্দনীয়। আমরা সংগঠনগত ভাবে প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছি।”

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, গত ১৩ মার্চ লালগড়ের বিডিও-র কাছে সুদীপবাবু অভিযোগ করেন, স্বজনপোষণের ফলে প্রকৃত দরিদ্ররা বঞ্চিত হচ্ছেন। নথিপত্র দিয়ে তিনি দেখান, ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে পঞ্চায়েত প্রধান দ্রৌপদী চালকের শাশুড়ি ছবিরানি চালক ইন্দিরা আবাস যোজনায় ৭৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। একই পরিবারভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও দ্রৌপদীদেবীর স্বামী বংশী চালক তার আগের বছর ‘অধিকার’ প্রকল্পে ৪৮,৫০০ টাকা পেয়েছিলেন। উপপ্রধান অঞ্জনা মাহাতোর স্বামী অজিত মাহাতো আবার ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে ৭০ হাজার টাকা পেয়েও বাড়ি করেননি। পঞ্চায়েত সদস্য সোনালি হেমব্রমের স্বামী বিজেন, ননদ কেষ্টমণি ও দেওর বিমল একই পরিবারভুক্ত হয়েও পর পর তিন বছর তিনটি পৃথক প্রকল্পে তিন বার বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছেন। বিজেনবাবু ২০১২-১৩ অর্থ বর্ষে অধিকার প্রকল্পে ৪৮,৫০০ টাকা পান। কেষ্টমণিদেবী ২০১৩-১৪ বর্ষে ‘আমার ঠিকানা’ প্রকল্পে ৪৮,৫০০ টাকা পেয়েছেন। বিমলবাবু ২০১৪-১৫ অর্থ বর্ষে ইন্দিরা আবাসে ৭৫ হাজার টাকা পেয়েছেন।

পঞ্চায়েতের আর এক সদস্য বৈদ্যনাথ মুর্মুর স্ত্রী রেবতী ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে অধিকার প্রকল্পে ৪৮,৫০০ টাকা পেয়েছিলেন। বৈদ্যনাথবাবুর মা চুনকিদেবী ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাসে ৪৮,৫০০ টাকা পেয়েছেন। তাঁরাও বাড়ি করেননি। পঞ্চায়েত সদস্য দিলীপ পালের স্ত্রী আরতি ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে ৭০ হাজার টাকা পেয়েছেন। দিলীপবাবুর ভাই প্রদীপ পাল ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাসে ৭৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। পঞ্চায়েত সদস্য তুলসিমণি টুডুর স্বামী দেবরাজ ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাসে ৭৫ হাজার টাকা পেয়েও বাড়ি বানাননি। এই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে টেন্ডার সম্পর্কিত নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলেও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানানোর পরদিনই ধরমপুর পঞ্চায়েত কার্যালয়ে আক্রান্ত হন সুদীপবাবু। অভিযোগ, প্রধানের স্বামী বংশীবাবুর নেতৃত্বে কয়েকজন তাঁকে মারধর করেন। লালগড় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সুদীপবাবু। পঞ্চায়েত প্রধান দৌপদীদেবী অবশ্য ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে মানতে নারাজ। তাঁর যুক্তি, “আমরাও গরিব পরিবারের লোক। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাই পরিজনেরা বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছেন।” সুদীপবাবুর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে তাঁর বদলি চেয়ে বিডিওর কাছে আবেদনও করেছেন দৌপদীদেবী। তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি লালগড়ের বিডিও অভিজিৎ সামন্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement