দুর্ঘটনার পর কারখানা চত্বরে ভিড়। সোমবার নিজস্ব চিত্র
কারখানায় কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হল এক কর্মীর। জখম হয়েছেন দু’জন। রবিবার রাতে দুর্ঘটনাটি ঘটে হলদিয়ার দেভোগ এলাকার জেভিএল রিফাইনারিতে। ভোজ্য তেলের ওই কারখানায় হাইড্রোজেন পাইপ ফেটে বিস্ফোরণ ঘটাতেই দুর্ঘটনা বলে কারখানা সূত্রে জানানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত কর্মীর নাম জন্মেজয় পণ্ডা (৩৫)। তাঁর বাড়ি ওডিশায়। আহত দু’জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁদের তমলুক জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সোমবার তাঁদের কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার পর এ দিন সকালে কারাখানায় কর্মীদের নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ দেখান শ্রমিকেরা। দুর্ঘটনাগ্রস্ত প্ল্যান্টটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ–প্রশাসন।
পুলিশ ও কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাত ১২টা নাগাদ কারখানার নতুন প্ল্যান্টে কাজ চলছিল। তখনই বিস্ফোরণ ঘটে। কারখানার এক কর্মী অরুণাংশু দেবনাথ জানান, রবিবার রাতে প্ল্যান্টটি চালু হয়েছিল। সেই সময় সেখানে মোট ৫ জন কাজ করছিলেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন সংস্থার ও তিনজন ঠিকা কর্মী। কারখানা সূত্রে খবর, প্ল্যান্টে হাইড্রোজেন গ্যাসের পাইপে মরচে ধরে গিয়েছিল। ওই কর্মীরা মরচে মেরামত করার সময়েই পাইপ ফেটে হাইড্রোজেন বাতাসের সংস্পর্শে আসায় বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের চোটে জন্মজেয়বাবু-সহ বাকিরা ছিটকে পড়েন। ঘটনাস্থলে মারা যান জন্মজেয়বাবু। গুরুতর জখম হন কমলেশ দাস ও সুদর্শন কোটাল নামে দু’জন। তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাস্থলে জড়ো হন কারখানার অন্য কর্মীরা। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে কাউকে না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা।
এ ধরনের প্ল্যান্ট চালানোর জন্য যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা দরকার তা ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন কর্মীরা। চন্দন দোলই নামে এক শ্রমিকের অভিযোগ, দিনের পর দিন এভাবেই কাজ চালাতে হচ্ছে। তারই শিকার হতে হল তিনজনকে। অভিযোগ, নিরাপত্তার সরঞ্জাম হিসাবে সেফটি বুট, হ্যান্ড ব্রোশ, হেলমেট কোনও কিছুই ছিল না মৃত ও আহতদের। বিস্ফোরণের খবর পেয়ে এ দিন ঘটনাস্থলে যান হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল (স্বাস্থ্য, পরিবহণ) আজিজুল রহমান, ভবানীপুর থানার পুলিশ, কারখানার নিরাপত্তা সংক্রান্ত ম্যানেজার, জেনারেল ম্যানেজার প্রমুখ। তড়িঘড়ি প্ল্যান্টটি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে মৃত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলে বিক্ষোভ ওঠে। হলদিয়া পুরসভার তরফে আজিজুল বলেন, ‘‘দুর্ঘটনাগ্রস্তদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। পাশাপাশি কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্যও কারখানা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।’’ তবে কারখানার কর্মীরা নিরাপত্তা না থাকার যে অভিযোগ তুলেছেন তা মানতে চাননি কারখানার ম্যানেজিং ডিরেক্টর পি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে কর্মীদের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে।’’