বিপরীত: পরিচ্ছন্নতার স্লোগানের পাশেই অপরিচ্ছন্ন নিকাশিনালা। তমলুক জেলা হাসপাতাল চত্বরে। নিজস্ব চিত্র
মঙ্গলবার সকাল ১১টা। ঘটা করে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসের অনুষ্ঠান হচ্ছে তমলুকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালের সভাঘরে। আলোচনাসভায় হাজির জেলার স্বাস্থ্যকর্তা থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির চিকিৎসকরা, শিশুবিকাশ প্রকল্প আধিকারিকরাও। মশা ঠেকাতে কী করণীয়, কী ভাবেই বা মশাবাহী রোগ প্রতিরোধ করা যায়, সে সব বোঝাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
অথচ সভাঘরের বাইরেই অন্য ছবি। জেলা হাসপাতাল চত্বরের নিকাশিনালা ভর্তি আবর্জনা। সেখানে উড়ে বেড়াচ্ছে মশা-মাছি। দুর্গন্ধে পাশ দিয়ে চলা দায়। একই ছবি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেও। পচা-দুর্গন্ধময় জলে ভরা নিকাশিনালার পাশেই বসে আছেন রোগীর পরিজনেরা। বহির্বিভাগের সামনে নিকাশি নালাতেও উড়ে বেড়াচ্ছে মশা-মাছির দল। ছেলেকে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এনেছিলেন নন্দকুমার ব্লকের ঠেকুয়াচকের বাসিন্দা বৃন্দাবন মাইতি। দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চাপা দিয়েই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন বৃন্দাবনবাবু। বললেন, ‘‘দেখেই বোঝা যাচ্ছে বহু দিন এই নিকাশিনালা পরিষ্কার করা হয়নি। জেলা হাসপাতালে এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ভাবা যায় না।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল জানিয়েছেন, এ বছর ম্যালেরিয়া দিবসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্লোগান— ‘মঙ্গলের জন্য ম্যালেরিয়া নির্মূলকরণ’। ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। আর ২০২০-এর মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ শতাংশ কমাতে হবে। এ জন্য সচেতনতা প্রসারেই জোর দিচ্ছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। পরামর্শ দিচ্ছেন, জল জমা বন্ধ করা, ঘুমোনোর সময় মশারি টাঙানোর, জ্বর হলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার।
সচেতনতার সেই ছবি অবশ্য জেলা হাসপাতালেই অনুপস্থিত। ফলে, মশা ঠেকাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর কতটা সক্রিয়, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পাঁচ বছরে জেলায় ম্যালেরিয়ায় কারও মৃত্যু হয়নি। তবে গত বছরও পূর্ব মেদিনীপুরে প্রায় ৩০০জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাও কেন জেলা হাসপাতালের চারপাশ এত অপরিচ্ছন্ন? নিকাশি নালায় মশার আস্তাকুঁড়?
এ ক্ষেত্রে দায় ঠেলাঠেলিতেই ব্যস্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আর পুরসভা। তমলুক জেলা হাসপাতালের সুপার গোপাল দাস বলেন, ‘‘হাসপাতালের নিকাশিনালাগুলি পরিষ্কার করে পুরসভা। আর নিকাশিনালায় জলে জমে রয়েছে বলে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।’’ অন্য দিকে, তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেনের দাবি, ‘‘হাসপাতাল চত্বর সাফসুতরো রাখার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই। নিকাশি নালাও ওঁদেরই পরিষ্কার করার কথা। বিশেষ পরিস্থিতিতে আমাদের অনুরোধ করে আমরা তা পরিষ্কার করে দিই।’’
এই টানাপড়েনেই শিকেয় উঠেছে হাসপাতালের নিয়মিত সাফাই। তবে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইবাবুর আশ্বাস, ‘‘শুধু জেলা বা মহকুমা হাসপাতাল নয়, প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ তমলুক জেলা হাসপাতালে নিকাশি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার কাজও শীঘ্রই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সুপার।