মুখেভাত: পাঁউশি অনাথ আশ্রমে। নিজস্ব চিত্র
চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। জন্ম থেকেই এরা হোমে। বাবাকেও কখনও দেখেনি। জন্মের পর মায়ের সঙ্গেও কাটেনি বেশিদিন। মঙ্গলবার তেমনই দু’জনের মুখে ভাতের অনুষ্ঠান হল তাদের নতুন ‘জন্মস্থানে’। অর্ণব গিরি আর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়, জন্মের দিন থেকে দুজনের ঠাঁই ভগবানপুর-২ ব্লকের পাঁউশি অন্ত্যোদয় অনাথ আশ্রম। এদিন দুই নবজাতকের অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকলেন দুশোরও বেশি মানুষ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার শিশু কল্যাণ সমিতির সভাপতি দিলীপ দাস।
অনন্যা এবং অর্ণবকে প্রথমবার মুখে ভাত খাইয়ে দিলেন আশ্রমের কর্ণধার বলরাম করণ। হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুকে কয়েক মাস আগে শঙ্করআড়া সেতুর কাছে একটি ঝোপ থেকে অচৈতন্য এক মহিলাকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁর ঠাঁই হয়েছিল পাঁউশি আশ্রমে। মাসখানেক আশ্রমে থাকার পর সন্তান প্রসব করেছিলেন ওই মহিলা। এর কিছুদিন বাদে মন্দারমণি এলাকা থেকে আরও এক মহিলাকে উদ্ধার করে পুলিশ। আদালতের নির্দেশে তিনি আশ্রয় পেয়েছিলেন পাঁউশি হোমে। সেখানে কয়েক দিনের মধ্যে এক কন্যাসন্তান প্রসব করেন ওই মহিলা। জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির সভাপতি দিলীপ দাস বলেন, ‘‘প্রত্যেক মায়ের ইচ্ছা হয় নিজের ছেলেমেয়ের জন্মদিন এবং অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান করার। জেলার সব হোমে এ ধরনের ব্যবস্থা করা হয়। তাই প্রথা মেনে এদিন পাঁউশি আশ্রমে দু’জনের অন্নপ্রাশন এবং চারজনের জন্মদিন পালন করা হয়েছে।’’
অনন্যার মা গান্ধারী বন্দ্যোপাধ্যায় (নাম পরিবর্তিত) বলেন, ‘‘ঝোপের ভেতর অচৈতন্য অবস্থায় পড়েছিলাম। ভাবতেই পারিনি কখনও সন্তানের মুখ দেখব। তারপর থেকে সন্তান কেমন থাকবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা হত। কিন্তু এদিন যে ভাবে মেয়ের অন্নপ্রাশন হল, তাতে সত্যিই আমি অভিভূত।’’ অর্ণবের মা কুন্তী গিরি (নাম পরিবর্তিত)র কথায়, ‘‘জন্মের পর থেকেই ছেলে বেবি ফুডে অভ্যস্ত। আশ্রম থেকে অনেক সাহায্য করা হচ্ছে। আমাদের মতো অসহায় পরিবারের ছেলের মুখে ভাত হচ্ছে দেখে আনন্দে চোখে জল এসে গিয়েছিল।’’ আশ্রমের কর্ণধার বলরাম করণ বলেন, ‘‘অন্নপ্রাশন উপলক্ষে আশ্রমে দু’শো মানুষকে খাওয়ানো হয়েছে। পাশাপাশি দু’জনকে বিভিন্ন উপহারও দেওয়া হয়েছে।’’