এটা নাকি নিকাশি নালা! প্লাস্টিক-থার্মোকলে হাঁসফাঁস দ্বারিবাঁধ খালের। মেদিনীপুরে। — নিজস্ব চিত্র ।
দাবদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির অপেক্ষায় দিন গুণছিলেন সকলে। গত মঙ্গলবার সন্ধেয় হাল্কা বৃষ্টিতে কিছুটা হলেও স্বস্তির শ্বাস নিলেন মেদিনীপুরের বাসিন্দারা। একইসঙ্গে এই সামান্য বৃষ্টিতেই জলে ভাসল শহরের বেশ কয়েকটি রাস্তা। যার ফলে বর্ষার আগে ফের একবার বেআব্রু হল শহরের বেহাল নিকাশি চিত্র।
বৃষ্টি হলেই নোংরা জল নালা জল ভাসিয়ে দেয় রাস্তা। এ বারও অবশ্য তার অন্যথা হয়নি। মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে কেরানিতলা, এলআইসি মোড়-সহ শহরের বেশি কিছু জায়গায় জল দাঁড়িয়ে যায়। নোংরা জল পেরিয়েই যাতায়াত করতে বাধ্য হন শহরের বাসিন্দারা। যদিও এ নিয়ে হেলদোল নেই পুরসভার। পুরপ্রধান প্রণব বসুর অবশ্য দাবি, “নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতির চেষ্টা চলছে।”
সমস্যাটা ঠিক কোথায়?
শহরের অধিকাংশ নিকাশি নালা প্লাস্টিকে অবরুদ্ধ। নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় নালায় স্তূপাকার হয়ে থাকে জঞ্জাল। একইসঙ্গে রয়েছে হকার সমস্যাও। শহরের বেশিরভাগ রাস্তায় নালার মুখ বন্ধ করে গজিয়ে উঠেছে ঝুপড়ি-দোকান। অনেক স্থায়ী দোকান রাস্তায় সামগ্রী ডাঁই করে রাখছে। অনেকে আবার রীতিমতো কংক্রিটের স্ল্যাব তৈরি করে নিকাশি নালা চাপা দিয়ে দিয়েছেন। ফলে আবর্জনা জমতে জমতে বুঝে গিয়েছে নর্দমান মুখ। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
যদিও দোকানগুলিকে নোটিস পাঠিয়ে পুর- কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছেন, অবিলম্বে ওই স্ল্যাব সরিয়ে নিতে হবে। নালা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্দেশ না- মানলে পুরসভা কড়া ব্যবস্থা নেবে। উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “বেশ কয়েকটি দোকান- লজে নোটিস পাঠানো হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে স্ল্যাব সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ না- মানলে পুরসভা যা পদক্ষেপ করার তাই করবে। প্রয়োজনে মেশিন নিয়ে গিয়ে স্ল্যাব ভাঙা হবে।” তাঁর কথায়, “নিকাশি নালাগুলোয় আবর্জনা জমে না থাকলে কেরানিতলায় এ ভাবে সামান্য বৃষ্টি হলে জল জমত না। নালার মুখগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলেই বারবার এই ঘটনা ঘটছে। সব দিক দেখেই নোটিস পাঠানো হয়েছে।”
মেদিনীপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে কেরানিতলা অন্যতম। এটি শহরের চারমাথার মোড়। একদিকে নান্নুরচক- বটতলাচক, একদিকে স্টেশন রোড- রাঙামাটি, একদিকে কালেক্টরেট মোড় এবং অন্যদিকে জর্জকোর্ট রোড। এই এলাকা দিয়ে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করেন। ফলে, রাস্তায় জল জমলেই ভোগান্তি চরমে ওঠে।
কেরানিতলায় একটি কালভার্ট রয়েছে। পুর- কর্তাদের একাংশের ধারণা ছিল, নতুন করে এই কালভার্ট তৈরি করা হলে জল- যন্ত্রণা কমবে। সেই মতো ক’মাস আগে কালভার্ট নতুন করে তৈরিও করা হয়। অবশ্য দিন কয়েক আগের সামান্য বৃষ্টিতে সেই রাস্তায় জল জমে। পুর- কর্তাদের একাংশ বুঝতে পারেন, শুধু কালভার্টের জন্য জল জমত না। নিকাশি নালাগুলোর অবস্থাও খারাপ। বৃষ্টির জল নালা দিয়ে যেতে না পেরে রাস্তায় বইছে।
এক পুর- কর্তার বক্তব্য, “নালার মুখগুলো তো থার্মোকলের থালা- বাটি- গ্লাস এবং প্লাস্টিকের কাপ, গ্লাসেই বুজে আসছে। শহরে এত থার্মোকল- প্লাস্টিক ব্যবহার হলে তো সমস্যা হবেই! রোজ কি আর সব এলাকার সব নালা পরিষ্কার করা সম্ভব!” শহরের এক কাউন্সিলরের কথায়, “শুধু মুখে বলে কিছু হবে না। কাজের কাজ করতে হবে! কেন থার্মোকল- প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে পুরসভা এতদিন ব্যবস্থা নেয়নি! যথেচ্ছ থার্মোকল- প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলেই তো নর্দমার মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নোংরা জল উঠে আসছে রাস্তায়। মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছেন।”
সমস্যা তো নতুন নয়। তাও কেন পুরসভা উদাসীন? উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে! শহরের লজ মালিকদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, লজ ভাড়া দেওয়ার সময় লিখিয়ে নিতে হবে যে কোনও ভাবেই থার্মোকল- প্লাস্টিকের থালা- বাটি- গ্লাস ব্যবহার করা হবে না। এ ব্যাপারে লজ- মালিকদের সতর্কও করা হচ্ছে।’’
জলযন্ত্রণা কমবে কিনা, তার উত্তর দেবে সময়।