ব্যাঙ্কের সামনে আবর্জনার স্তূপ। নিজস্ব চিত্র।
ব্যাঙ্কের প্রবেশপথে আবর্জনা রাখাকে ঘিরে বৃহস্পতিবার চাপানউতোর শুরু হয় মেদিনীপুর শহরে। অভিযোগ, বন্ধের দিনে শহরের বিধাননগর এলাকার এই দু’টি ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। তৃণমূল নেতৃত্ব এটা ভাল চোখে দেখেননি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জব্দ করতেই তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা নর্দমার আবর্জনা সাফাইয়ের নাম করে ব্যাঙ্কের প্রবেশপথে আবর্জনা রেখে দেয়। যাতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সমস্যায় পড়ে। আগামী দিনে আর বিরোধী দলের ডাকা বন্ধের দিনে ব্যাঙ্ক বন্ধ না- রাখেন।
শহরের ওই এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর তথা পুরসভার পুর- পারিষদ (জল) মৌ রায় অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “ওখানে নর্দমার আবর্জনা সাফাইয়ের কাজ চলছিল। আবর্জনার কিছু অংশ ব্যাঙ্কের সামনে রাখতে হয়েছিল। হাইড্রেন তো পরিষ্কার করতেই হবে। এ নিয়ে বিতর্কের কিছু থাকতে পারে না।” একই দাবি পুরপ্রধান প্রণব বসুর। প্রণববাবু বলেন, “নর্দমা সাফাই চলছিল। নর্দমা থেকে আবর্জনা তুলে একটা জায়গায় তো রাখতেই হবে। না- হলে সাফাইয়ের কাজ হবে কি করে? ব্যাঙ্কের সামনেই হাইড্রেন রয়েছে। তাই আবর্জনা তুলে ব্যাঙ্কের সামনে রাখতে হয়েছিল।”
গ্রাহকদের একাংশের যে অভিযোগ, বন্ধের দিনে ব্যাঙ্ক না- খোলার জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জব্দ করতেই পুরসভা এ কাজ করেছে? পুরপ্রধান প্রণববাবুর জবাব, “মেদিনীপুর শহরে তো শুধু ওই এলাকার দু’টি ব্যাঙ্কই নয়, আরও কয়েকটি ব্যাঙ্ক বুধবার বন্ধ ছিল। ম্যানেজাররা পালিয়ে গিয়েছিলেন। অন্য ব্যাঙ্কগুলোর ক্ষেত্রেও কি এমন ঘটনা ঘটেছে? তাহলে এই অভিযোগ উঠছে কেন? নর্দমার আবর্জনা সাফাই হবে। কেন হবে, তারও জবাব দিতে হবে!”
গ্রাহকদের একাংশের অবশ্য দাবি, পুরসভা ইচ্ছে করেই এ কাজ করেছে। বর্ষার সময় অনেক বলাবলি করেও শহরের হাইড্রেনগুলো সাফাই করানো যায় না। ফলে, নর্দমার জল রাস্তায় উঠে আসে। বৃহস্পতিবার সকালে আচমকাই সাফাই শুরু হয়। বস্তুত, বুধবার বামপন্থীদের ডাকা বন্ধের মিশ্র প্রভাব পড়ে মেদিনীপুরে। বেশির ভাগ বেসরকারি বাস পথে নামেনি। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। একাংশ ব্যাঙ্কও বন্ধ ছিল। স্কুল- কলেজ- সরকারি অফিসগুলো অবশ্য খোলা ছিল। বাস কম থাকায় অফিসগুলোয় উপস্থিতি ছিল অনান্য দিনের থেকে কম। দলেরই এক সূত্রে খবর, বিধাননগরের ওই দুই ব্যাঙ্কের শাখা খোলানোর জন্য ওই দিন কম চেষ্টা করেননি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। অবশ্য সব চেষ্টা বিফলে যায়।
শেষমেশ তৃণমূল- সমর্থক বলে পরিচিত একাংশ গ্রাহককে দিয়ে পুলিশের কাছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়। যে অভিযোগে বলা হয়, ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় গ্রাহকেরা সমস্যায় পড়েছেন। তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য বক্তব্য, সব ঘটনায় দলকে জড়িয়ে দেওয়া ঠিক নয়। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষ বলেন, “সমস্যায় পড়ে গ্রাহকেরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়ে থাকতে পারেন। এখানে দল কি করবে? শহরের গুটিকয়েক ব্যাঙ্কই বুধবার বন্ধ ছিল। অন্য ব্যাঙ্কগুলো খোলাই ছিল। মানুষ চান, বন্ধে জনজীবন সচল থাকুক।” ব্যাঙ্কের প্রবেশপথে আবর্জনা রাখা নিয়ে সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক সারদা চক্রবর্তীর বক্তব্য, “ওরা যা পারছে তাই করছে। এ সবের প্রতিবাদ হওয়া দরকার।”