শ্রদ্ধা: মন্দিরতলা শ্মশানে অন্ত্যেষ্টির আগে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
কারও হাতে জাতীয় পতাকা, কেউ বা দাঁড়িয়ে ফুলের মালা হাতে। কারও বা হাতে ছোট্ট চিরকুটে লেখা— ‘চাচাজি অমর রহে’।
গরমে ভিড়ে কষ্ট হলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা চাচাকে একবার দেখার জন্য এ ভাবেই অপেক্ষা করল রেলশহর। শেষ যাত্রাতেও চাচা হয়ে রইলেন সকলের।
বৃহস্পতিবার সকাল ন’টা নাগাদ গোলবাজারে কংগ্রেস কার্যালয় থেকে জ্ঞানসিংহ সোহনপালের দেহ প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় সাউথ সাইডে বাসভবনে। সেখানে পারিবারিক আচার সম্পন্ন হওয়ার পর চাচার দেহ কংগ্রেসের সেবা দলের অফিস, খড়্গপুর পুরসভা, মহকুমা হাসপাতাল মোড়, রেল হাসপাতাল, গোলবাজার হয়ে সুভাষপল্লি গুরুদ্বারে নিয়ে যাওয়া হয়। গুরুদ্বারে ধর্মীয় পারলৌকিক ক্রিয়াকলাপ সেরে মন্দিরতলা শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় চাচার মরদেহ। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুট দেওয়া হয় চাচাকে। মন্দিরতলা শ্মশানেই চাচার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
চাচার মরদেহ নিয়ে এ দিন শোকমিছিল যত এগিয়েছে রাস্তার দু’ধারে ভিড়ও তত বেড়েছে। ভিড়ের মাঝে জাতীয় পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা বাবু নায়েক, পি সিমাচলামরা বলছিলেন, “চাচা তো আমাদের সকলের। আমরা সাধারণ মানুষ। কোনও দল করি না। তাই এই জননেতাকে শেষ সম্মান জানাতে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়েছি।”
গোলবাজারে ফুলের মালা দিয়ে চাচাকে শ্রদ্ধা জানান ব্যবসায়ীরা। জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রাজা রায় বলেন, “আমরা শহরের ব্যবসায়ীরা সুদিন-দুর্দিনে যখনই চাচাকে পাশে চেয়েছি তখনই পেয়েছি। তাই ওঁকে শেষ সম্মান জানাতে আমরা সামিল হয়েছি।” চাচার মরদেহ গুরুদ্বারে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিজনেরা। মন্দিরতলা শ্মশানে চাচাকে গান স্যালুট দেয় রাজ্য সশস্ত্র বাহিনী। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী মাইকে ঘোষণা করেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জ্ঞানসিংহ সোহনপালের অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার আগে আমরা গান স্যালুট জানাচ্ছি।”
এ দিন উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো, পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার, জেলা কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ, কংগ্রেসের শহর সভাপতি অমল দাস, জেলা নেত্রী হেমা চৌবে প্রমুখ। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘আমরা মনে করি জ্ঞানসিংহ সোহন পাল ও নারায়ণ চৌবে জননেতা ছিলেন। ইতিমধ্যেই আমরা মন্দিরতলা শ্মশানে নারায়ণ চৌবের স্মৃতিতে সৌধ নির্মাণ করেছি। চাচার স্মৃতিতেও এই শ্মশানে আমরা পুরসভার পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধ গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”