সুভাষ দাস। নিজস্ব চিত্র।
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত কাটা গেল রোগীর একটি হাত। এমন ঘটনায় শোরগোল পড়েছে।
সুভাষ দাস নামে ওই রোগীর বাড়ি খড়্গপুর শহরে। তিনি পেশায় রেলকর্মী। এ ঘটনায় গুড়গুড়িপাল থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। অভিযোগ জানানো হয়েছে জেলাশাসকের দফতর, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরেও। অভিযোগ জানানো হয়েছে মেদিনীপুরের এক চিকিৎসকের নামে। তিনি অস্ত্রোপচার করেছিলেন। ওই চিকিৎসক অবশ্য চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ মানেননি। সুভাষ বলেন, ‘‘বাঁ হাত ঠিক করতে গিয়ে আমার ডান হাত কেটে দিতে হল। আমি সুস্থ, স্বাভাবিকই ছিলাম। আমি বিচার চাই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আগামী দিনে এমনটা আর যাতে কারও সঙ্গে না ঘটে।’’
অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তি চেয়েছেন সুভাষ। বছর কয়েক আগে একটি দুর্ঘটনায় এই রেলকর্মীর বাঁ-হাতের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ওই চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করিয়েছিলেন তিনি। হাতে প্লেট লাগানো হয়েছিল। পরে ওই প্লেট বার করে নেওয়ার কথা। ওই প্লেট বার করার জন্য চলতি মাসের গোড়ার দিকে ওই চিকিৎসকের কাছে যান তিনি। ওই চিকিৎসক তাঁকে শহরতলির এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। জানান, সেখানেই অস্ত্রোপচার হবে। পরামর্শ মতো ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন ওই যুবক। বাঁ হাতের প্লেট বার করার জন্য তাঁর ডান হাতে একটি চ্যানেল করা হয়। ইঞ্জেকশনও দেওয়া হয়। এরপরই ডান হাতে প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হয় তাঁর। অভিযোগ, ডাকা হলেও চিকিৎসক সময় মতো আসেননি। সঠিক সময়ে চিকিৎসা হয়নি। পরে ওই রোগীকে কলকাতার এক হাসপাতালে স্থানান্তর করে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হয়েছে। শারীরিক পরিস্থিতি দেখে চিকিৎসকেরা ওই যুবকের ডান হাতের কনুই থেকে বাদ দিয়েছেন। না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হত।
রোগী অস্ত্রোপচার করাতে গিয়েছিলেন বাঁ হাতের। সেখানে বাদ গেল রোগীর ডান হাতই। ঘটনায় জেলার স্বাস্থ্য মহলেও শোরগোল পড়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের আশ্বাস, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ সোমবার মেদিনীপুরে এসেছিলেন জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। ঘটনা নিয়ে মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ঘটনার কথা এই শুনলাম। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তা দুর্ভাগ্যের। আমি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বলব, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে।’’ বিষয়টি নিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবনচন্দ্র হাঁসদা বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এ ক্ষেত্রে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ওই কমিটি অভিযুক্ত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলবে। শহরতলির ওই বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলবে। তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়বে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে। এরপর রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করবেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।