তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভবানীপুরের মাতঙ্গিনী মোড় এলাকা। বৃহস্পতিবার সকালে ওই ঘটনার জেরে উভয় পক্ষের দশ জন তৃণমূল কর্মী জখম হন। দু’টি গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। ঘটনার খবর পেয়ে ভবানীপুর থানার পুলিশ ও র্যাফ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যদিও এ দিন দুপুর পর্যন্ত ঘটনার অভিযোগ দায়ের হয়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ পেলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে হলদিয়া শহর যুব তৃণমূলের পক্ষ থেকে সিটি সেন্টার মোড় থেকে ২১ জুলাই কলকাতার সমাবেশের প্রচারের উদ্দেশে এক মিছিল বের হয়। শহরের মাতঙ্গিনী মোড়ে মিছিল শেষ হয়। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন শহর যুব তৃণমূল সভাপতি রুহুল ইসলাম ওরফে বাপি। মাতঙ্গিনী মোড়ের কাছে তৃণমূলের একটি কার্যালয় রয়েছে। ওই কার্যালয়ে রোজ বসেন হলদিয়ার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কমলা পট্টনায়কের ছেলে তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা সঞ্জীব পট্টনায়ক।
অভিযোগ, এ দিন যুব তৃণমূলের মিছিল ওই অফিসের কাছাকাছি যেতেই দু’পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়। বচসা ক্রমে সংঘর্ষের আকার নেয়। প্রসঙ্গত, বোমা মজুর রাখার অভিযোগে গত ২৩ মার্চ শহর যুব তৃণমূল সভাপতি রুহুল ইসলাম গ্রেফতার হন। কয়েকদিন জেল হেফাজতে থাকার পর জামিন পান তিনি। যদিও রুহুলের অভিযোগ, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।
রুহুল ইসলামের অভিযোগ, ‘‘২১ জুলাইয়ের সমাবেশের প্রস্তুতি উপলক্ষ্য সিটি সেন্টার থেকে মিছিল করে মাতঙ্গিনী মোড়ের দিকে যাচ্ছিলাম। সেই সময় সঞ্জীব পট্টনায়ক কয়েকজন সিপিএম ও বিজেপি-র লোকেদের নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘হামলার জেরে আমাদের দশ জন কর্মী আহত হয়েছেন।’’ রুহুলের দাবি, ‘‘সঞ্জীবের মা আমাদের দলের কাউন্সিলর। তবে সঞ্জীব দলের কেউ নয়। পুরো বিষয়টি জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’
বুধবার রাতে ভবানীপুরে মাতঙ্গিনী মোড় এলাকায় বৈঠক করতে গিয়েছিলেন রুহুল ইসলাম। সেই দিনই দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তারপর ফের এ দিন দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল হয়। রুহুলের অভিযোগ, বুধবার রাতেও সঞ্জীব পট্টনায়কের লোকজন তাঁদের এক কর্মীকে মারধর করেছে। তবে এ দিন পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া শহর যুব তৃণমূলের মিছিল হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। রুহুল ইসলামের দাবি, ‘‘মাইক ছাড়াই মিছিল করেছি। এ ধরনের মিছিলে প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন নেই। আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা গুরুতর।’’
যদিও সঞ্জীব পট্টনায়ক জানান, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও ঘটনা ঘটেনি। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। সঞ্জীববাবুর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘বাপি-সহ কিছু ছেলে মেয়েদের উদ্দেশে কটূক্তি করছিল। তাঁরা ইভটিজিংও করে। এলাকার মানুষই এর প্রতিবাদ করেছেন। এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
রুহুলের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অচিন্ত্য শাসমল জানান, ওরা নিজেরা মারপিট করে আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছে। একইভাবে, বিজেপির জেলার সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাসও জানান, তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল হয়েছে। ওই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।