কাঁথির মাছ বাজার। নিজস্ব চিত্র।
ভরা মরসুমে দেখা মেলেনি পুবালি বাতাস আর ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টির। তাই এবার সমুদ্রে তেমন ছিল না ‘রূপোলি শস্য’ ইলিশ। তবে, শীতকালে প্রতিবছর দেখা মেলে রুলি, ভোলা, তাপড়া, পাটিয়ার মত সামুদ্রিক মাছের। এবার হেমন্ত গড়িয়ে শীতের আগমনে মৎস্যজীবীদের জালে সেই সব মাছেরও তেমন দেখা নেই। এদিকে লাগাতার দাম বাড়ছে ডিজেলের। মরসুমেও সামুদ্রিক মাছ আগের মত না মেলায় খানিকটা হতাশ মৎস্যজীবী এবং ট্রলার মালিকেরা।
গত ১৫ জুন থেকে উঠে গিয়েছে মাছ ধরায় কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ব্যান পিরিয়ড’। সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছে কয়েকশো ট্রলার। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি কম পরিমাণ সামুদ্রিক মাছ উঠেছে মৎস্যজীবীদের জালে। সপ্তাহ দুয়েক ধরে জালে ধরা পড়েছে শুধু চিংড়ি আর পমফ্রেট, ভোলা মাছ। দৈনিক ২০০ থেকে ২৫০ টন মাছ দিঘা মোহনা বাজারে এসেছে বলে জানা গিয়েছে। অথচ গত বছর এমন সময় নিয়মিত ৪০০ টন বা তার বেশি মাছ আমদানি হত বলে জানাচ্ছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। এদিকে সব রকমের সামুদ্রিক মাছের আমদানি কমে যাওয়ায় শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রুলি, ভোলা, তাপড়া, পাটিয়া, চমচম প্রভৃতির নানা রকমের সামুদ্রিক মাছের দাম। দিঘা, কাঁথি-সহ জেলার বাজারগুলিতে সেই সব সামুদ্রিক মাছের দাম এখনও অনেক বেশি। প্রদীপ বর্মন নামে এক মাছের ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘রুলি এবং পাটিয়া ১০০ টাকা করে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর ৫০০ গ্রাম বা তার বেশি ওজনের ভোলা মাছ আড়াইশো থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।’’ সমুদ্রে মাছ আগের মত পাওয়া যাচ্ছে না সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ট্রলার মালিকেরাও। এ প্রসঙ্গে ‘দিঘা মোহনা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাসও বলেন, ‘‘এ বছর মোটামুটি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। তবে আগের বছর এই সময় যেখানে প্রতিদিন করে সব রকমের সামুদ্রিক মাছ ৪০০ টন পাওয়া যেত। এখন সেটা আড়াইশো টনের বেশি হচ্ছে না।’’
মাছের আকালের জন্য সমুদ্রে বটম ট্রলিং অর্থাৎ মাটি আঁকড়ে জাল টানার পদ্ধতিকেই দায়ী করেছেন কেউ কেউ। দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতির অভিযোগ, ‘‘গত কয়েক বছরে সমুদ্র এবং নদীতে যথেচ্ছ বটম ট্রলিং চলছে। সেই সঙ্গে ঘন ফাঁসের জাল ব্যবহার হচ্ছে। অধিকাংশ সময় ছোট মাছ ধরে আনা হচ্ছে। চারাপোনা মারা পড়ছে। বেপরোয়া মাছ শিকারই জীব বৈচিত্র্য নষ্ট করে দিয়েছে।’’ এ সবের জন্যই সমুদ্র ও নদীতে ৭০ শতাংশ মাছ বিলুপ্ত হয়েছে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির দাবি। তবে পরপর দু’বছর মাছ ধরার মরসুম শুরুর আগে আমপান, ইয়াসের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাবকেও এর জন্য দায়ী করেছেন একাংশ মৎস্যজীবী।
মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, দিঘা এবং সংলগ্ন এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ট্রলার রয়েছে। যার মধ্যে হাজার দুয়েক ট্রলার শুধুমাত্র ইলিশের উপরে নির্ভর করে। বাকি ট্রলার সেপ্টেম্বর থেকে সমুদ্রে গিয়েছে। এ বছর দেড় হাজারের বেশি ট্রলার মরসুমের শুরু থেকেই ইলিশের সন্ধানে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু মাছ সে ভাবে না পাওয়ায় কিছু কিছু মালিক ট্রলার নামাতে চাইছেন না। মাছের আকালের সঙ্গে জুড়েছে জ্বালানি তেলের লাগাতার দাম বৃদ্ধি। ভর্তুকিতে পেট্রল এবং ডিজেল দেওয়ার দাবিও তুলেছেন মৎস্যজীবীরা। যদিও সহ-মৎস্য অধিকর্তা(সামুদ্রিক) জয়ন্ত কুমার প্রধান বলেন, ‘‘বছরের শুরুতে যেভাবে মাছের আকাল চলছিল, সে তুলনায় এখন অনেকটাই সমুদ্রের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। হয়তো কোথাও কোথাও দু-একটি ট্রলার সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়নি। তবে এই মুহূর্তে নথিভূক্ত প্রায় ২,২০০ র কাছাকাছি ট্রলার নিয়মিত সমুদ্রে মাছ ধরছে।’’