সোনার কারবারে মন্দা, বন্ধ সাপ্তাহিক রুজি

‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না-হওয়া পর্যন্ত দোকান বন্ধ থাকবে’— এমনই নোটিস টাঙানো হয়েছে তমলুকের বেশ কিছু সোনার দোকানে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩০
Share:

বেশিরভাগ সোনার দোকান বন্ধ তমলুকে (বাঁ দিকে) ফিরে যাচ্ছেন এক ক্রেতা ( ডান দিকে) নিজস্ব চিত্র।

‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না-হওয়া পর্যন্ত দোকান বন্ধ থাকবে’— এমনই নোটিস টাঙানো হয়েছে তমলুকের বেশ কিছু সোনার দোকানে। বিকিকিনি যেমন বন্ধ, তেমনই বন্ধ কর্মচারীদের বেতনও। সমস্যায় ছোট স্বর্ণশিল্পীরা।

Advertisement

৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট সমস্যায় সোনার দোকানে প্রভাব পড়েছে সবথেকে বেশি। গয়না তৈরির অর্ডার নেই, ফলে কারখানাগুলিতে কাজ প্রায় বন্ধ। বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির তমলুক শাখা সম্পাদক নারায়ণ মাইতি বলেন, ‘‘শহরের বেশিরভাগ দোকান গত দু’দিন বন্ধ। নতুন করে গয়না তৈরির অর্ডার দিচ্ছেন না কেউ। রোজগার বন্ধ। আমরা কারিগরদের সাপ্তাহিক বেতনটুকুও দিতে পারছি না।’’ স্বর্ণশিল্পী বাপি পাড় বলেন, ‘‘এমনিতেই গত ৬ মাস সোনার কাজে মন্দা। রোজগার আগের চেয়ে অনেকটাই কমে গিয়েছে। তার উপর এই নোটের সমস্যা। সোনার দোকান বন্ধ, আমরাও কাজ পাচ্ছি না। খুব সঙ্কটে পড়েছি।’’

নামী ব্র্যান্ডের সোনার দোকানগুলি অবশ্য খোলা রয়েছে। কিন্তু অতিপরিচিত বড়-মাঝারি সোনার দোকানের ঝাঁপ বন্ধ। কলকাতার বৌবাজারের মতো তমলুকের বেনেপুকুর। সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে বড় –মাঝারি মিলিয়ে প্রায় ৭০টি সোনার দোকান। আশেপাশে রয়েছে গয়না তৈরির কারখানা। গত দু’তিন দিনে সে এলাকায় সুনসান। দোকানের বন্ধ শাটারে ঝুলছে নোটিসবোর্ড— ‘৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের জন্য যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার সুরাহা না-হওয়া পর্যন্ত দোকান বন্ধ থাকবে।’

Advertisement

বেনেপকুর এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী গৌতম সিংহ বলেন, ‘‘পাঁচ গ্রাম সোনার গয়না কিনতে হলেও ১৫ হাজার টাকা লাগে। সে টাকাটা তো কেউ এটিএম থেকেও তুলতে পারছেন না।’’ তাঁর দাবি, এখানকার ক্রেতারা অবশ্য নগদ টাকা নিয়ে কেনাকাটা করতেই বেশি অভ্যস্ত। সকলেই ৫০০, ১০০০ টাকার নোট নিয়ে আসেন। তাই ক্রেতাদের সঙ্গে যাতে ওই নোট নিয়ে ঝামেলা না-হয়, সে জন্যই দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত।

একটি নামী দোকানের তমলুক শাখার আধিকারিক অরূপ দাসও সে কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দোকানে গয়না কেনার জন্য ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড বা চেক নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্রেতাই ৫০০, ১০০০ টাকার নোট নিয়ে আসেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই নোট নেওয়া হচ্ছে না। ফলে বিক্রি কমছে।’’

একই সমস্যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমাও। সেখানে অবশ্য সব দোকানই খোলা। তবে ভরা বিয়ের মরসুমে কোনও কোনও দোকানে রয়েছে ভারী গয়নার বরাত। কিন্তু সেগুলি নিতে আসছেন না কেউ। কোনও কোনও দোকান আবার নতুন করে অর্ডার নিতে চাইছে না। স্থানীয় সোনা ব্যবসায়ী কাশিনাথ মণ্ডল বলেন, “গত ক’মাস কোনও বিক্রি হয়নি। এখন বিয়ের মরসুমে ক্রেতা আসছে। কিন্তু ভারী অর্ডার নিতে পারছি না। নোটের সমস্যা। সোনা কিনতে না পারলে আমরা অর্ডার নিয়েই আর কী হবে?’’

ঘাটাল মহকুমায় সোনা ব্যবসা রমরমিয়েই চলে। মফস্সল শহরে অনলাইন সোনা কেনবেচা মোটেও জনপ্রিয় নয়। এমনকী ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডও তেমন চলে না। সকলেই নগদে কেনাবেচা করতে চান। ফলে বিক্রিবাটায় মন্দা।

ঘাটালের হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের মেয়ের বিয়ে। বিয়ের গয়না অর্ডার করেছিলেন। কিন্তু নিয়ে আসতে পারছেন না দোকান থেকে। তিনি বলেন, “পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে একশো গ্রাম সোনার গহনার অর্ডার দিয়েছিলাম। সামনের সপ্তাহেই মেয়ের বিয়ে। এখনও হাতে টাকা নেই। গয়না তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। ধারও দেবে না।’’ উল্টো দিকে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখোমুখি। দাসপুরের ব্যবসায়ী কমল সরকারের কথায়, “আমি প্রায় চারশো গ্রাম গয়না তৈরি করে ফেলে রেখেছি। যাঁরা সেগুলো অর্ডার করেছিলেন, সকলকে খবর দিয়েছি। কিন্তু সকলেই বলছেন টাকা নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement