এগোচ্ছে সমুদ্র, ভাঙন ভয় গোপালপুরে

ভরা বর্ষা নিয়ে চিন্তার মেঘ ঘনাচ্ছে গোপালপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায়।দেশপ্রাণ ব্লকের দারিয়াপুর পঞ্চায়েত এলাকা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে সেচ দফতরের কংক্রিটের বাঁধ ভাঙছে অনেকদিন ধরেই। সম্প্রতি তা বিপজ্জনক আকার নিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দরিয়াপুর (কাঁথি) শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০২:৪৮
Share:

বাড়ছে সমুদ্র পাড়ের ভাঙন। ছবি: সোহম গুহ।

ভরা বর্ষা নিয়ে চিন্তার মেঘ ঘনাচ্ছে গোপালপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায়।

Advertisement

দেশপ্রাণ ব্লকের দারিয়াপুর পঞ্চায়েত এলাকা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে সেচ দফতরের কংক্রিটের বাঁধ ভাঙছে অনেকদিন ধরেই। সম্প্রতি তা বিপজ্জনক আকার নিয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে নোনাজল ভাসিয়ে দিতে পারে গোপালপুর, ভোগপুর, পিরজপুর, বাঁকিপুট, মুকুন্দপুর কাদুয়া। বৃহস্পতিবার বাঁকিপুট থেকে গোপালপুর পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত সমুদ্র বাঁধ পরিদর্শন করেন বিডিও সঞ্জয় দাশগুপ্ত, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তরুণ জানা, পঞ্চায়েত প্রধান কেকাপাল। বিডিও স্বীকার করেছেন, সমুদ্র বাঁধটির অবস্থা সত্যই শোচনীয়। আশু মেরামতির প্রয়োজন। কিন্তু সেই মেরামতি হবে কবে? বিডিও-র উত্তর, ‘‘ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা শাসকের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে।” পঞ্চায়েত প্রধানের আক্ষেপ, ‘‘হাতে আর সময় নেই। আষা়ঢ় মাস শেষ হতে চলল। প্রথম থেকেই যদি সেচ দফতর একটু সচেতন হতো, তা হলে বাঁধের এমন করুণ দশা হতো না।’’

প্রশাসন যে এ বিষয়ে উদাসীন, সে কথা বারবার বলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রাতের পর রাত বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা নিয়েই কাটান তাঁরা। দেশপ্রাণ ব্লকের দারিয়াপুর পঞ্চায়েতের গোপালপুর থেকে বাঁকিপুট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সমুদ্রপাড় বাঁচাতে সেচ দফতর কয়েকবছর আগে বোল্ডার ফেলে কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করে। কিন্তু সেই বাঁধ নিয়মিত সংস্কারের দিকে তেমন নজর দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা ও ব্যপক আঘাতে তা বিপজ্জনকভাবে ভাঙতে শুরু করেছে। নোনা জলের আঘাতে কংক্রিটের আস্তরণ ভেঙেছে। বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ব্ল্যাকস্টোন, বোল্ডার বেরিয়ে পড়েছে। দূর থেকে দেখলেই বোঝা যায় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়েছে সমুদ্র বাঁধ।

Advertisement

গোপালপুরে ক্ষতির মুখে বাঁধ।

জলোচ্ছ্বাস যে কোনও দিন সবকিছু ভাসিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। পিরিজপুর গ্রামের অমলেন্দু জানা, বাঁকিপুটের অনিল সাউয়েরা জানালেন, সমুদ্র বাঁধের পাশেই বিঘার পর বিঘা জমিতে সব্জি চাষ করেন তাঁরা। শুধু দেশপ্রাণ ব্লক নয়, গোটা কাঁথি মহকুমার সবচেয়ে বেশি সব্জি চাষ হয় এই দরিয়াপুর অঞ্চলেই। সব্জি চাষই এখানকার মূল জীবিকা। সামান্য নোনাজল ঢুকলেও চাষের মারাত্মক ক্ষতি হবে। সেখানে বাঁধ ভাঙলে তো ভেসেই যাবে এলাকা। সমুদ্র পাড়েই রয়েছে অনেকগুলি গ্রাম। ফলে বসতবাড়িও যে ভাসবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

গ্রামবাসীদের সঙ্গেই সেচ দফতরের দিকে আহুল তুলেছেন দারিয়াপুরের দুই তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য নন্দ করণ ও বলাই পয়ড়্যা। তাঁদের দাবি, চোখের সামনে একটু একটু করে ভাঙতে ভাঙতে সমুদ্রবাঁধ আজ বিপদের মুখে, অথচ সেচ দফতরের সদর্থক ভূমিকা নেই। সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার স্বপন পণ্ডিত অবশ্য জানিয়েছেন, ‘‘ইতিমধ্যেই গোপালপুরের সমুদ্র বাঁধ রক্ষা ও মেরামতির করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তরুণ জানার কথায়, “সেচ দফতর প্রতিবছরই টুকটাক বাঁধ মেরামতির কাজ করে। কিন্তু সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে বাঁধের কংক্রিট খসে পাথর বোল্ডার বেরিয়ে পড়ছে। যতদ্রুত সম্ভভ লোহার তারের জালের বেড়া করে বোল্ডার বা পাথর না বসাতে হবে।’’ তাঁর দাবি, যথোপযুক্ত ভাবে সমুদ্র বাঁধটি রক্ষার জন্য সেচদফতরের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে।

কিন্তু সেই আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছেন না বাসিন্দারা। সামনেই শ্রাবণ, ভাদ্র। সারা মাস জুড়ে ভরা কোটালে উত্তাল সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস হবেই। তার আগে মেরামত না হলে সমুদ্র বাঁধ ভাঙবেই। ভেসে যাবে গোটা এলাকা। তাই আতঙ্কে দিন গোনা ছাড়া আর
উপায় নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement