পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ শুনলেন গীতা 

মঙ্গলবার সবংয়ের বুড়াল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়েছিলেন মানস ভুঁইয়ার স্ত্রী তৃণমূল বিধায়ক গীতা ভুঁইয়া।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

সবং শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৩৮
Share:

মধ্যমণি: বুড়াল গ্রামে খোশমেজাজে মানস পত্নী। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

স্বামী পোড়খাওয়া রাজনীতিক তথা রাজ্যসভার সাংসদ। তবে স্ত্রী রাজনীতিতে এসেছেন বছর দু’য়েক আগে। ২০১৭ সালে বিধানসভা উপ নির্বাচনে জিতে হয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক। এ বার ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে গিয়ে তাঁকে শুনতে হল দলের স্থানীয় নেতা ও পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ।

Advertisement

মঙ্গলবার সবংয়ের বুড়াল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়েছিলেন মানস ভুঁইয়ার স্ত্রী তৃণমূল বিধায়ক গীতা ভুঁইয়া। এ দিন বিধবা ভাতা থেকে আবাস যোজনার বাড়ি, রাস্তা, শৌচাগার-সহ নানা অপ্রাপ্তি নিয়ে তাঁর কাছে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সরব হন স্থানীয় বাসিন্দারা। ক্ষোভ শুনে বিচলিত হননি গীতা। বরং এ দিন বেশ শান্ত মাথায় বিক্ষুব্ধদের হাতে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির হেল্পলাইন নম্বরের কার্ড দিয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

বুড়াল বাস স্টপেজের যাত্রী প্রতীক্ষালয় থেকে ঢালাই রাস্তা ধরে ৩ কিলোমিটার দূরে গ্রাম বুড়াল। সরু ঢালাই রাস্তায় গাড়ি যায়নি। তাই এক কর্মীর বাইকে সওয়ার করেই বিধায়ক ওই গ্রামে পৌঁছন। সঙ্গী হিসেবে ছিলেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সমীর দাস, সাধারণ সম্পাদক জয়দেব জানা, উপ-প্রধান সন্দীপ খাটুয়া ও কর্মী চন্দন মাইতি। গীতার সঙ্গে থাকা ‘ভিলেজ ভিজিট কিটে’ ওই চার জনের নাম ছিল। তাঁরা সবাই মানস বিরোধী জেলা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতির অনুগামী বলে পরিচিত। তবে মানস অনুগামী বলে পরিচিত যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আবু কালাম বক্স, নেতা বিকাশ ভুঁইয়া, স্বপন মাইতিরাও ছিলেন বিধায়কের সঙ্গে। দুপুরে কর্মী মিঠুরানি বেরার বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করে বিকেলে গ্রামেই স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। রাতে ছিলেন বুড়াল বাজারের কাছে কর্মী সুদীপা জানার বাড়িতে।

Advertisement

এ দিন ঢালাই রাস্তা শেষ করে কাদা ভর্তি ইটের সরু রাস্তায় যান বিধায়ক। তাঁকে কাছে পেয়ে অশীতিপর চঞ্চলারানি আদক বলেন, “বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা কিছুই পাইনি। স্থানীয় পঞ্চায়েতের লোকেদের জানিয়েও সুফল পাইনি।” সেখান থেকে বেরোনোর সময়ে দুই মহিলা ছুটে এসে পথ আটকান। তাঁদের মধ্যে অষ্টমী সামন্ত প্রশ্ন করেন, “একজনের বাড়ি ঘুরেই চলে যাবেন! আমাদের বাড়ি যাবেন না? আমরা কী অবস্থায় রয়েছি দেখবেন চলুন।” সেই সময়েই দলের কর্মীরা চেঁচিয়ে বলেন, “যা বলার এখানেই বলুন। ওই কাদা রাস্তায় যাওয়া যাবে না।” গীতা অবশ্য কর্মীদের কথা না শুনেই কাদা পথ পেরিয়েই এগিয়ে যান। অষ্টমীর ক্ষোভ, “বাড়িতে অসুস্থ স্বামী। অভাব সত্ত্বেও কোনওরকমে ছেলেকে পড়াচ্ছি। পঞ্চায়েতে বারবার বলেও এতদিনে একটা বাড়িও পাইনি।” ১০৩ বছরের বৃদ্ধা চারুবালা মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে শৌচাগার না পাওয়ার অভিযোগ শুনতে হয় বিধায়ককে। পথের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলেন পদ্মাবতী দাস। তিনি জানান, ১২ বছর আগে তাঁর স্বামী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। তবে তিনি বিধবা ভাতা, আবাস যোজনা-সহ কোনওসরকারি সুবিধা পাননি। সকলকেই সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন বিধায়ক।

স্থানীয় এক কর্মী বলছিলেন, “দলের গোষ্ঠীকোন্দল মেটাতে এসবই প্রশান্ত কিশোরের ভাবনা।” জেলা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি বলেন, “বিধায়কের তালিকায় থাকা ওই চার জন আমার অনুগামী হলেও তাঁরা দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চায় না। দলের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা রয়েছে সেটা এতেই প্রমাণিত। আর এখানেই মানসিকতার পার্থক্য।” সব দেখে বিধায়ক গীতা ভুঁইয়া বলছেন, “গ্রামে জনসংযোগের বিষয়টি আমাদের কাছে নতুন নয়। সারাবছর মানুষের সঙ্গে নানা কর্মসূচিতে জনসংযোগ করি। এখন এলাকায় এসে দিদিকে বলো কর্মসূচি প্রচার করলাম।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement