ভগবানপুরের বচ্ছিপুর গ্রামে জলবন্দি দশা। নিজস্ব চিত্র।
ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’-এর প্রভাব না পড়লেও নিম্নচাপের জেরে মঙ্গলবার বিকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিতে ফের বিপর্যস্ত হল জেলা। দেওয়াল চাপা এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেলেন দু’জন। দেওয়াল চাপা পড়ে আহত হয়েছেন এক দম্পতিও। জমা জলে যাতায়াতের জন্য পাঁশকুড়ার পুর এলাকার একাংশে নামনো হল নৌকা।
এক সপ্তাহ আগেই কেলেঘাই নদীর বাঁধ ভেঙে পটাশপুর, ভগবানপুর, এগরা, চণ্ডীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। সে সময় নিম্নচাপের বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন ছিল ময়না, তমলুক, শহিদ মাতঙ্গিনী, নন্দকুমার, চণ্ডীপুর, পাঁশকুড়া, কোলাঘাট ব্লকে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি। সেই রেশ কাটার আগেই মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলায় গড়ে ৭৩.১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। প্লাবিত ভগবানপুর-১ ব্লকে হয়েছে ১২১.২ মিলিমিটার। কাঁথিতে ১১৪.৩, নন্দীগ্রামে ১১১.৮, পাঁশকুড়ায় ৮৪.৪ এবং দিঘায় ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বন্যা কবলিত ও জলমগ্ন এলাকায় জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া জলস্তর বেড়েছে কাঁসাই ও চণ্ডীয়া নদীতেও। এতে দুই নদীর মধ্যবর্তী ময়নার অধিকাংশ গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘ভগবানপুর এলাকায় জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ওই এলাকার বহু বাসিন্দাকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’
এ দিন ভগবানপুর-১ ব্লকের কাকরা গ্রামে বছর বাষট্টির এক বৃদ্ধা জ্যোৎস্না সাউ নিজের পাকা বাড়ির বারান্দায় বসে কাজ করছিলেন। সে সময় পাশের একটি কাঁচা বাড়ির দেওয়াল তাঁর উপরে ভেঙে পড়ে। তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। রামনগর-১ ব্লকের বিল আমুড়িয়া গ্রামে বৃষ্টি চলাকালীন একটি মাটির বাড়ি ভেঙে চাপা পড়েন এক দম্পতি। গুরুতর জখম অবস্থায় দুজনকে দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়েরা।
এ দিন সকালে কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের চৌধুরীবাড় গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান শেখ ইকবাল (১৮) নামে যুবক। স্থানীয় সূত্রের খবর, শেখ ইকবাল বৃষ্টি চলাকালীন বিদ্যুতের লাইন মেরামত করছিলেন। কোনও কারণের জলের সংস্পর্শে এসে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয় ইকবালের।
এ দিন বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বহু এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। ময়না ব্লকে সাব-স্টেশন ফের জলমগ্ন হয়ে পড়ায় বুধবার বিদ্যুৎ সবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে দফতর। এছাড়া, বন্যা কবলিত ভগবানপুর-১ ও ২, পটাশপুর-১ ও ২ ব্লকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে বেশ কয়েকদিন ধরে। জেলা বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওনাল ম্যানেজার শ্যামল হাজরা বলেন, ‘‘বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলেও বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’’
নতুন করে জলস্তর বেড়েছে পাঁশকুড়া পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। পরস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের গড় পুরুষোত্তমপুর এলাকায়। অন্তত ১০০টি পরিবার জলবন্দি সেখানে। এই এলাকায় যাতায়াতের জন্য নৌকা নামাতে হয়েছে।কোলাঘাট ব্লকের সিদ্ধা ১, ২, বৃন্দাবনচক, পুলশিটা, সাগরবাড়, ভোগপুর, দেড়িয়াচক ইত্যাদি এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বৃষ্টির জলে। ভেড়ির ফলে সব থেকে খারাপ পরস্থিতি দেড়িয়াচকে।
জলমগ্ন হয়েছে শিল্প শহর হলদিয়া এবং নন্দীগ্রামের একাধিক এলাকা। হলদিয়া টাউনশিপে হলদিয়া রিফাইনারি আবাসনের বেশ কিছ অংশে জল জমেছে। ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশ এবং ১৫ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বহু অংশ জলের তলায়। অভিযোগ, দুটি নিকাশি খালের সংস্কারের অভাবে ২৪ এবং ২৯ নম্বর ওয়ার্ডেও জল দাঁড়াচ্ছে। হলদিয়ার মহকুমাশাসক লক্ষ্মণ পেরুমল আর বলেন, ‘‘এনডিআরএফ দল দিঘায় রয়েছে। প্রয়োজনে হলদিয়াতে ডেকে আনা হবে। বিভিন্ন জায়গায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।’’
দিঘা-সহ উপকূল এলাকায় এ দিন কোনও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস পেয়ে আগাম প্রস্তুত ছিল প্রশাসন।