পালিয়ে গিয়েছে ভেড়ির মালিক। পড়ে রয়েছে মাটি কাটার জেসিবি যন্ত্র। কোলাঘাটের জফুলি-বিবিচকে। নিজস্ব চিত্র
জোর করে চাষের জমিতে ভেড়ি তৈরি নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে কোলাঘাটে। হয়েছে বিক্ষোভ। কৃষকদের তরফে প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে চিঠি। কিন্তু তাতে সুরাহা না হওয়া এবার নিজেরাই রুখে দাঁড়ালেন কৃষকেরা। তাঁদের তাড়া খেয়ে পালালেন ভেড়ির মালিক। আর ঘেরাও হলেন তাঁর শাগরেদরা।
কোলাঘাটের দেড়িয়াচকের জফুলি মৌজায় চাষের জমিতে ভেড়ি তৈরির জন্য মাস খানেক আগে কাজ শুরু হয়। অভিযোগ, ভেড়ির মালিক গোপাল বর্মন জফুলি-বিবিচক গ্রাম পরিচালন কমিটিকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে চাষিদের জমি দিতে রাজি করানোর ভার দেন। কিন্তু ১৫০ জন চাষির মধ্যে অন্তত ৫০ জন চাষি জমিতে দিতে রাজি হননি। দিন পনেরো আগে অনিচ্ছুক চাষিদের নিয়ে গঠিত হয় জফুলি-বিবিচক কৃষি জমি ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে ভেড়ি করা যাবে না বলে এলাকায় পোস্টার দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের দাবি, এর পরেও সোমবার জফুলি মৌজায় ইচ্ছুক চাষিদের জমিতে ভেড়ি তৈরি শুরু হয়। ওইদিন জফুলি-বিবিচক কৃষিজমি ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে প্রশাসনের সমস্ত স্তরে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। মঙ্গলবার বিকালে ওই মৌজায় অনিচ্ছুক কৃষকদের জমিতে মাটি কাটার কাজ শুরু হলে এলাকায় শুরু হয় বিক্ষোভ। কমিটির অন্তত শ’দুয়েক সদস্যের বিক্ষোভের মুখে জেসিবি এবং ট্র্যাক্টরের চালকেরা গাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। ওই সময় ভেড়ির মালিক গোপাল এবং তাঁর সঙ্গীদের দেখে তেড়ে যান বিক্ষোভকারীরা। গোপাল ছুটে পালিয়ে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে সেখান থেকে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন গোপাল।
ওই সন্ধ্যায় এলাকায় রটে যায়, ভেড়ির মালিকের লোকজন জফুলি বাজারে জফুলি গ্রাম কল্যাণ কমিটির অফিসে বসে বৈঠক করছেন। এই খবর জানার পর, জফুলি-বিবিচক কৃষিজমি ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সদস্যরা ওই অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। ভয়ে ভেড়ি মালিকের লোকজন ও গ্রাম কমিটির লোকজন ওই অফিসের দরজা লাগিয়ে ভেতরেই বসে থাকেন। খবর দেওয়া হয় কোলাঘাট থানায়। কোলাঘাট থানার পুলিশ এলে তাদের সামনে ভেড়ি না করার একটি মুচলেকা লেখানো হয়। তাতে সই করেন ভেড়ি মালিকের লোকজন ও জফুলি-বিবিচক গ্রাম পরিচালন কমিটির সদস্যেরা। তাতে লেখা হয়, জফুলি মৌজার ছ’টি গ্রামের কৃষক একমত না হলে ওই মৌজায় ভেড়ি তৈরি করা হবে না।
জফুলি-বিবিচক কৃষিজমি ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সম্পাদক লক্ষ্মীকান্ত প্রামাণিক বলেন, ‘‘ভেড়ির মালিক গ্রাম কল্যাণ কমিটিকে মোটা টাকা দিয়েছেন। তাই ওই কমিটির লোকেরা জমি দেওয়ার জন্য চাষিদের চাপ দিচ্ছিল।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে জফুলি-বিবিচক গ্রাম কল্যাণ কমিটির সভাপতি তপন বর বলেন, ‘‘গ্রাম কমিটি ভেড়ির মালিকের কাছ থেকে কোনও টাকা নেয়নি। সাক্ষী হিসেবে ওই মুচলেকায় গ্রাম কমিটির কয়েকজনের সই রয়েছে।’’
গোটা ব্যাপারে কোলাঘাটের বিডিও মদন মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই এলাকার একটি অভিযোগ পেয়েছি। চাষের জমিতে ভেড়ি করা যাবে না এই মর্মে আমরা ইতিমধ্যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতকে জানিয়েছি। কেউ আইন ভাঙলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।’’