সেই ‘সঞ্জীবনী’ গাছ। ফাইল চিত্র
সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ, বিজ্ঞানমনস্ক সংগঠনের সদস্যের এলাকায় গিয়ে প্রচার— দুইয়ের জেরে এক দিনের শান্তি। শুক্রবার ফের ‘উৎপাত’ শুরু হয়েছে সেরাজুদ্দিনের বাড়িতে।
পাঁশকুড়ার রানিয়াড়ার রাজমিস্ত্রি সেরাজুদ্দিন মল্লিকের বাড়ির একটি গাছ ঘিরে ‘সঞ্জীবনী’র গুজব ছড়িয়েছিল। গাছের পাতা, শিকড় সংগ্রহে প্রতিদিনই আশেপাশের এলাকা থেকে লোকজন সেরাজুদ্দিনের বাড়িতে আসছিলেন। গুজব এমন পর্যায়ে ছড়িয়েছিল যে, বন দফতরের প্রতিনিধিদেরও স্থানীয়েরা প্রথমে গাছের নমুনা সংগ্রহ করতে দেননি। পরে অবশ্য বন দফতর জানায়, গাছটির কোনও বিশেষ গুণ নেই। বটানিস্টরা জানা, গাছটি বিরল নয়। এটি নাগদন্তী। যার বিজ্ঞানসম্মত নাম ক্রোটন অবলঙ্গিফোলিয়াস। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় তা পাওয়া যায়।
সেরাজুদ্দিন জানাচ্ছেন, সংবাদমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশ পাওয়ার পরে বৃহস্পতিবার এলাকায় গাছ ঘিরে মানুষের উৎসাহ কমে। ওই দিন বিকালে ‘ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি’র সদস্যেরা এলাকায় গিয়ে গুজবে কান না দেওয়ার প্রচারও চালান। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকেই ফের লোকজন তাঁর বাড়িতে গাছের পাতা, শিকড়ের জন্য আসছেন বলে জানিয়েছন সেরাজুদ্দিন।
সেরাজুদ্দিন বলেন, ‘‘আগের মত এখন আর ভিড় নেই ঠিকই। তবে এখনও অনেকেই এটিকে আশ্চর্য গাছ বলে মনে করছেন। এ দিনও অনেকেই বাড়িতে এসেছেন গাছের পাতা তোলার জন্য।’’ তাঁর খুড়তুতো ভাই তৈমুর মল্লিকের কথায়, ‘‘গত ১০ দিন ধরে মানুষকে বুঝিয়েই চলেছি। এখন ভিড় অনেকটা কম। তবে লোক আসছেনই। মানুষের মন থেকে সঞ্জীবনীর এই ভ্রান্ত ধারণা পুরোপুরি মুছে যায়নি।’’
গাছটি ‘মৃত সঞ্জীবনী’ নয়, প্রশাসন তা জানানোর পরেও ভিড় করছেন কেন? এক স্থানীয়ের কথায়, ‘‘গাছে তো অলৌলিক গুণ রয়েছে বলে শুনেছি। একটা পাতা বা শিকড় জোগাড় করে দেখতে ক্ষতিটা কোথায়!’’ এ ব্যাপারে ‘ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি’র জেলা সম্পাদক সুমন্ত শী বলেন, ‘‘মানুষের মধ্যে কু-সংস্কার দীর্ঘদিন ধরে জমে রয়েছে। এক দিনে এক বেলার প্রচারে সেই অন্ধ বিশ্বাস দূর করা সম্ভব নয়। আমার চেষ্টা করেছি। তবে প্রশাসনিক উদ্যোগে আরও বৃহৎভাবে লাগাতার ওই এলাকায় প্রচার চালানোর প্রয়োজন রয়েছে।’’