হাতি তাড়ানোর সময় হুলা পার্টির লোকেদের মারধরের অভিযোগ উঠল। রবিবার বিকেলে শালবনির ভাউদি গ্রাম থেকে হাতি তাড়ানোর অভিযান শুরু করে হুলা পার্টির লোকেরা। সেই সময় স্থানীয়রা হুলা পার্টির লোকেদের মারধর করে বলে অভিযোগ। মারধরে জখম দু’জনকে শালবনি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রদীপ মাহাতো নামে আর একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রায় দেড়শো হাতি বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে শালবনির বিভিন্ন জঙ্গলে ঘুরছে বলে বন দফতর সূত্রে খবর। সন্ধে নামলেই হাতির দল ধানের খেতে নেমে তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে বাড়ছে ফসলের ক্ষতির পরিমাণও। ভাউদি গ্রামের বাসিন্দা কাশীনাথ সারের অভিযোগ, ‘‘মিরগা বিটের বনবাঁধি, ভাঙাবাঁধ, ধানঘোরি এলাকায় হাতি রয়েছে। হাতির দল খেতে নেমে সব ধান নষ্ট করে দিয়েছে। শালবনিতে প্রায় এক হাজার বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েছে।’’
একইভাবে, জোড়াকুসমী গ্রামের বাসিন্দা সুবল মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘হাতির দাপটে ধান ও আলুর ক্ষতি হয়েছে। বন দফতর থেকে হাতি তাড়ানোর জন্য যে তেল দিচ্ছে, তাতে জল মেশানো। ওই তেলে হুলা জ্বলছে না।’’ তাঁর দাবি, গত বছর হুলা পার্টির লোকেরা হাতির দলগুলিকে তাড়িয়ে নির্দিষ্ট পথে নিয়ে গিয়েছিল। ফলে ফসলের ক্ষতি কম হয়েছিল। সুবলবাবুর অভিযোগ, ‘‘হাতি তাড়ানোর কাজে এ বার সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আমরা হাতি তাড়িয়ে দিচ্ছি। সামনের গ্রামের লোকেরা আটকে দেওয়ায় ফের হাতির দল ফিরে আসছে। ফলে ক্ষতি বাড়ছে।’’
যদিও বন বিভাগের এক জেলা আধিকারিকের দাবি, বন দফতর থেকে হুলা পার্টি দিয়ে হাতি তাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু একাধিক জায়গায় স্থানীয় বাসিন্দারা হুলা পার্টির লোকেদের কাজ করতে বাধা দিয়েছে। তাঁর দাবি, গ্রামবাসীরা নিজেরাই হাতি তাড়ানোর কাজ করেছে। অনেকেই নিজের এলাকা থেকে হাতির দলকে পার করিয়েই হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। ফলে হাতির দল ফের পুরনো জায়গায় ফিরে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় গ্রামবাসী গ্রামের রাস্তা আটকে রাখাতেই সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাসাশক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, ‘‘সকলকে নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ডিএফও ও বিডিওকে বলেছি।’’ মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা জানান, রবিবার শালবনিতে বৈঠক করে এডিএফও, বিডিও ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে নিয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাতির দলকে শালবনি থেকে তাড়িয়ে গোয়ালতোড়ের হদহদির জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিংহ বলেন, ‘‘হাতির তাণ্ডবে ধান নষ্ট হওয়ার মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। রবিবার সকালে মিরগা বিট অফিসে বিষ্ণুপুর খসলা, যাত্রা গড়কেয়া গ্রামের বাসিন্দাদের ডেকে আলোচনা করে হাতি তাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ ডিএফও রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘সকলের সহযোগিতা আশা করছি। হাতি তাড়ানোর সময় স্থানীয়রা সহযোগিতা করলে হুলা পার্টির কাজ অনেক সহজ
হয়ে যাবে।’’