এগরা পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থীর প্রচার।
ভোটের আগে শেষ রবিবার। হাতে সময়ও কম। তাই পূর্ব মেদিনীপুরের তিন পুরসভায় ভোট প্রচার চলল জোরকদমে। রবিবার সকালে তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থনে তমলুক শহরের মোটরসাইকেল মিছিল করে দলের কর্মী-সমর্থকরা। তমলুক শহরে জেলা প্রশাসনিক ভবনের পিছনে সরকারি আধিকারিকদের আবাসনের কাছে বিবেকানন্দ নগরীতে পুরসভার ১৭, ১৮ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে সভা করেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। সভায় ফের নির্দল প্রার্থীদের আক্রমণ করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘এখানে আমাদের দলের প্রার্থীদের হারাতে বিরোধী সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি জোট বেঁধেছে। তারা কিছু এলাকায় সরাসরি লড়াই করতে পারবে না বুঝে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করছে। নিজেদের নীতি, আদর্শ বিসর্জন দিয়ে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করছে। এইসব আদর্শহীন জোটকে পরাস্ত করতেই হবে।’’ শুভেন্দুবাবু এ দিন বলেন, ‘‘তমলুক শহরের উন্নয়নে পুরসভার পাশাপাশি ‘হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ’ ও রাজ্য সরকারও সাহায্য করছে। আগামী দিনে আরও উন্নয়নের জন্যই শহরের বাসিন্দারা আমাদের সমর্থন বলে আমরা নিশ্চিত।’’ এ দিন তমলুক শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী রঞ্জিতা জানার সমর্থনে দলীয় সমর্থকদের নিয়ে পদযাত্রা করেন তমলুকের বিধায়ক তথা রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিরোধী সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপিও পথসভা ও বাড়িবাড়ি প্রচার চালায়। তমলুক শহরের বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে রোড-শো করেন অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়।
সভায় কলকাতা পুরসভার ভোট গ্রহণের দিনটি ভারতের ইতিহাসে একটি কালা দিন হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করলেন বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে তমলুক শহরের নিমতলা মোড়ে এক পথসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বিজেপি’র তারকা নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গতকাল কলকাতায় কোনও ভোটই হয়নি। হয়েছে প্রহসন। গণতন্ত্রকে স্বৈরাচারী শক্তি গলা টিপে মেরেছে।’’ এ ছাড়াও তমলুক পুরসভায় ১১, ১২, ১৩ ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে মিছিল করে দলের কর্মী-সমর্থকরা। বিকেলে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী পুরপ্রধান দেবিকা মাইতির সমর্থনে ট্যাবলো-সহ মিছিল হয়। একই সময়ে ওই ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী অলক সাঁতরার সমর্থনে মিছিল করে তাঁর সমর্থকরা। শেষ রবিবারের প্রচারে বিভিন্ন ওয়ার্ডে তৃণমূল, বামফ্রন্ট ও নির্দল প্রার্থীদের সমর্থনে মিছিল ও পথসভা করা হয় ।
তমলুকে মোটরবাইকে চড়েই প্রচারে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী।
অন্য দিকে, এ দিন কাঁথি পুরসভায় তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণামিত্র চৌধুরীর সমর্থনে মিছিল বের হয়। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অতনু গিরি, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সীতারাম মাঝি, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সুমিতা সিংহ, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সৌরীন্দ্রমোহন জানা ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সন্দীপ নন্দ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার চালান। তৃণমূল প্রার্থীদের হয়ে প্রচার চালান বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী ও বিদায়ী পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী। সন্ধ্যায় শহরের মেচেদা বাইপাস, দারুয়া-সহ তিনটি স্থানে দলীয় প্রার্থীদের হয়ে নিবার্চনী সভা করেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী।
বিদায়ী পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী বা বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী এ বারের পুরভোটে ইতিমধ্যেই জয়ী হয়ে গিয়েছেন, কারণ তাঁদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতেই পারেনি বিরোধীরা। রবিবার কাঁথি শহরের মেচেদা বাইপাসে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সীতারাম মাঝির সমর্থনে এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভন্দুবাবু বলেন, ‘‘বিজেপি বা সিপিএম আপনাদের বাড়িতে ভোট চাইতে এলে প্রশ্ন করে জেনে নিন যাঁরা সব ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে পারে না তাঁদের কাঁথি পুরভোটে দাঁড়ানোর বা ভোট চাওয়ার অধিকার আছে কিনা।’’ এ দিনের সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্তিত ছিলেন কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী, পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী ছাড়াও জেলা সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল, বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী, অর্ধেন্দু মাইতি, রণজিৎ মণ্ডল, বনশ্রী মাইতি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। শুভেন্দুবাবু কাঁথি পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়াও ৬, ১১ ও ১ নম্বর ওয়ার্ডে আরও দুটি সভা করেন।
কাঁথি পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সন্দীপ নন্দর প্রচার।
এ দিন এগরায় তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থনে রোড-শো করেন শুভেন্দুবাবু। বিকেলে এগরা সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। এরপর কলেজমোড় হয়ে শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে এগরা স্বর্ণময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে মিছিল শেষ হয়। এ দিন এগরা পুরসভার বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শীতলা মন্দির প্রাঙ্গণে ও এগরা কলেজের পাশের মাঠে দু’টি সভার আয়োজন করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রবীন চট্টোপাধ্যায়, দলের জেলা পর্যবেক্ষক সত্যব্রত দত্ত, জেলা সভাপতি তপন কর, জেলা সহ-সভানেত্রী মিনতি শূর, বিজেপির শহর সভাপতি অশোক প্রধান প্রমুখ। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রবীনবাবু বলেন, ‘‘ওরা মানুষের ভোটে নয়, লুঠ করা ভোটে জয়ী হতে চায়। কলকাতার ভোটেই তার নমুনা পাওয়া গিয়েছে। তাই এগরা পুরভোটে মানুষ এর জবাব দেবে।’’
এগরার মহকুমাশাসকের দফতরে ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণ শিবিরও অনুষ্ঠিত হয়। শিবিরে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য, মহকুমাশাসক অসীমকুমার বিশ্বাস-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। শিবিরে ভোট চলাকালীন কোনও কর্মীকে ভোটদান কক্ষের কাছে না যাওয়ার কথা বলেও সতর্ক করেন জেলাশাসক।
খড়্গপুরের পাঁচবেড়িয়ার ইদগাচক ও ইন্দার আনন্দনগরে দু’টি প্রচার সভায় যোগ দেন খড়্গপুরের মেদিনীপুর লোকসভার তৃণমূল সাংসদ অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। মুসলিম অধ্যুষিত পাঁচবেড়িয়া ও ভবানীপুরের অন্য দু’টি সভায় যোগ দেন তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ। সন্ধ্যায় প্রেমবাজারে আসেন তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়। কলকাতার নেতা দেবাশিস কোঙার এ দিন ঝুলির প্রচারসভায় যোগ দেন। বিকেলে খড়্গপুরের বারবেটিয়া থেকে কৌশল্যা, পুরাতনবাজার, বোগদা, হাসপাতাল পর্যন্ত প্রায় ১০কিলোমিটার পদযাত্রার আয়োজন করেছিল তৃণমূল। তাতে পা মেলান জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে ঝাড়েশ্বর মন্দিরে তৃণমূলের প্রচারসভা। রাতে সেখানেই যোগ দেন ঘাটালের সাংসদ তথা সুপারস্টার দেব। পরে তালবাগিচা বাজারেও সভা
করেন তিনি।
—নিজস্ব চিত্র।