বাজি কারখানার কাছেই এখনও পড়ে আধপোড়া সেই স্কুটি। নিজস্ব চিত্র
বাজি কারখানার বিস্ফোরণ স্থলে পড়ে থাকা আধপোড়া স্কুটিই এখন সিআইডির তদন্তকারীদের মূল অস্ত্র। দাবি, এই স্কুটি চড়েই একজন ব্যক্তি ভানুর কারখানায় বাজি কিনতে এসেছিলেন। কারখানায় সামনে ফাঁকা জমিতে বাজিতে আগুন ধরিয়ে তার গুনমান যাচাই করা হচ্ছিল। বাজির সেই আগুনের ফুলকি ছিটকেই খাদিকুলে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে। এমনটাই দাবি করেছেন স্থানীয়রা। এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনার পর সিআইডি ভানুর ছেলের সার ও কীটনাশকের দোকান সহ বাড়ি তল্লাশি করে বাজির মশলা সন্দেহে কয়েকটি বস্তা আটক করেছে।
গত মঙ্গলবার খাদিকুলের বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যুর সংখ্যা বীরভূমের বগটুইয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাকে ছুঁয়ে ফেলেছে। খাদিকুলের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ভানু বাগের মৃত্যুর পর সিআইডি অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত ভানুর স্ত্রী গীতাকে খুঁজছে। যদিও ঘটনার পর ছয় দিন কেটে গেলেও সিআইডি এখনও গীতার নাগাল পায়নি।
ঘটনার তদন্তে সিআইডির কাছে এখন অন্যতম হাতিয়ার বিস্ফোরণ স্থলের কাছে পড়ে থাকা আধপোড়া বাদামি রঙের একটি স্কুটি। সূত্রের খবর, এই স্কুটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ওড়িশার। স্কুটির পিছনে এখনও গোলাপী রঙের দুটি রাবার ব্যান্ড বাঁধা রয়েছে। বস্তায় বাজি কিনে এই রবার দিয়ে বেঁধে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। মঙ্গলবার বিস্ফোরণের আধঘন্টা আগে আনুমানিক সাড়ে এগারোটা নাগাদ ওই স্কুটিতে চেপে এক ব্যক্তি বাজি কারখানায় বাজি কিনতে এসেছিলেন বলে দাবি।
স্থানীয়দের আরও দাবি, চড়ক পুজোয় অবিক্রিত পুরনো বাজি ভানুর কারখানায় ছিল। সেই বাজির গুনগতমান যাচাই করতে ভানু ওই ব্যক্তিকে কারখানার বাইরে দূরে দুটি বাজিতে আগুন দিতে দেখতে বলে। কারখানার অদূরে ফাঁকা জমিতে ওই ব্যক্তি বাজিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই আগুনের ফুলকি ছিটকে বাজি কারখানায় সামনে রোদে দেওয়া বাজি ও বারুদে গিয়ে পড়ে। মুহূর্তে গোটা কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানার মধ্যে আটজন মৃত এবং পরে আহত যে তিনজনের পরে মৃত্যু হয়েছে সকলেই এই খাদিকুলের বাসিন্দা। বিস্ফোরণ স্থল থেকে কোনও অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার হয়নি। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ওই ব্যক্তি কারখানার বাইরে ছিলেন। বাজি বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। স্কুটিটি কারখানার মূল গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকায় সেটি পুড়ে যায়। যদিও স্কুটির নম্বর প্লেট ও উপরের অংশ অক্ষত রয়েছে। স্থানীয়রা উদ্ধার কাজ চালানোর সময় স্কুটিটিকে কারখানার বাইরে সরিয়ে দিয়েছিল। শনিবার সিআইডির একটি দল ভানুর ছেলে পৃথ্বিজিৎ বাগের গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ডে বন্ধ সার ও কীটনাশকের দোকানের তালা ভেঙে তল্লাশি চালায়। গোপীনাথপুরে তার বাড়ি ও সারের গুদামে তল্লাশি চালিয়ে বাজি ও বাজি তৈরির মশলা সন্দেহে সার ও ওষুধের ছাপ মারা বেশ কিছু ভর্তি বস্তা আটক করেছে। সেগুলি এগরা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
রবিবার বিকেলে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল এলাকা থমথমে। বিস্ফোরণে আহত দুই মৃতের দেহ ময়নাতদন্তের শেষে কলকাতা থেকে খাদিকুলে পৌঁছনোর কথা। সেখানেও দুটি দেহ সৎকার করা হবে।
এগরা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক মহম্মদ বৈদুজামান বলেন, ‘‘সিআইডি ঘটনায় তদন্ত করছে। তদন্তে নতুন করে কী উদ্ধার হয়েছে বলা সম্ভব নয়। শনিবার সন্ধ্যায় ভানুর ছেলের দোকান এবং বাড়িতেও সিআইডি তল্লাশি চালিয়েছে।’’