—প্রতীকী চিত্র।
পড়ুয়ারা স্কুলে এলেই মোবাইলে এসএমএস যাবে অভিভাবকদের। আবার ছুটি হলেও একইভাবে জানতে পারবেন অভিভাবকরা। ক্লাসে কী পড়ানো হল, বাড়িতে কী পড়তে হবে মোবাইলে অ্যাপ খুললেই জানতে পারবেন অভিভাবকরা। কোনও বেসরকারি স্কুল নয়, এমন অভিনব ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু হল জেলারই একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে!
বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মধ্যে প্রথম খড়্গপুর শহরের মালঞ্চর আর্য বিদ্যাপীঠ-২ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই পরিষেবার সূচনা হল। একটি ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে স্কুলের সমস্ত পড়ুয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই পরিষেবায়। এ দিন এই ডিজিটাল ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন খড়্গপুরের মহকুমাশাসক পাতিল যোগেশ অশোকরাও। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিডিও সৌমেন দাস, অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক রজতকুমার পাল প্রমুখ। এই পরিষেবার মাধ্যমে পড়ুয়াদের ডিজিটাল উপস্থিতির পাশাপাশি পঠনপাঠনের নানা দিক ডিজিটাল উপায়ে সম্পাদন করতে পারবেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলে পড়ুয়ারা ঢুকলেই অভিভাবকদের নিশ্চিন্ত করতে যেমন এসএমএস পৌঁছবে তেমনই স্কুল ছুটি হলেও অভিভাবকরা পাবেন এসএমএস। এ ছাড়াও পড়ুয়ারা গরহাজির থাকলে নির্দিষ্ট দিনের পরে অভিভাবকদের কাছে যাবে ফোন। তাতে অভিভাবকদের কাছে সমস্যার কথা জানতে চাওয়া হবে। এমনকি তা নথিভুক্ত থাকবে ওই ডিজিটাল ব্যবস্থার মোবাইল অ্যাপে। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘কিডসভার্সিটি’। এমনকি স্কুলে কী বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে, বাড়িতে কী পড়তে হবে-সহ পঠনপাঠনের খুঁটিনাটি অভিভাবকরা অ্যাপের মাধ্যমে জানতে পারবেন বলে জানা গিয়েছে। এমন অভিনব ব্যবস্থার উদ্বোধনের পরে মহকুমাশাসক পাতিল যোগেশ অশোকরাও বলেন, “এমন ব্যবস্থা আমাদের জেলার কোনও স্কুলে নেই বলেই জানি। স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেদের উদ্যোগে এই পরিষেবা চালু করেছেন। আমি স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলেছি আগামী তিনমাস এই ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুতে কী অগ্রগতি হচ্ছে তা দেখে আমাকে জানাতে। এর পরে আমি এই ব্যবস্থাকে মডেল করে অন্য স্কুলে এই ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ করব।”
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত এই পরিষেবা চালু করতে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে অভিভাবকদের দাবি মেনেই স্কুল কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থা চালু করায় আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অভিভাবকরাই। এমনকি প্রতিদিন এই পরিষেবায় প্রতি পড়ুয়া পিছু ৬০ পয়সা করে খরচ হবে। তবে উদ্বোধনের দিনে সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় ২১০জন পড়ুয়ার মধ্যে ১০০জন পড়ুয়া ওই ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করেছে। ৬ জনও রয়েছেন এই ব্যবস্থায়। ঘটনায় খুশি পড়ুয়ারাও। স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির সুমিত মল্লিক, চতুর্থ শ্রেণির স্নেহা মণ্ডলদের কথায়, “আমাদের নতুন আইডি কার্ড হয়েছে। সেটা এই মেশিনে স্পর্শ করলেই উপস্থিত হয়ে যাব এটা ভেবে বেশ মজা লাগছে। মা-বাবাও মোবাইলে জেনে যাচ্ছে। আমাদের আজকে আর ক্লাসে রোল কল হয়নি। এখন তো স্কুলে অনুপস্থিত হলেই সব জেনে যাবে এই মেশিন।”
বিষয়টি নিয়ে স্কুলের টিচার ইন-চার্জ বহ্নিশিখা নন্দী বলেন, “আমাদের স্কুলটা ফাঁকা মাঠের মাঝে। সেটা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন থাকেন অভিভাবকরা। তাঁদের পরামর্শেই আমরা এই ভাবনা শুরু করি। তার পরে একটি সংস্থার সঙ্গে কথা বলে এই অ্যাপ-সহ ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করেছি। অনেকের সাহায্য পেয়েছি। এখন পড়ুয়ারা স্কুলে থাকাকালীনও প্রতিটি বিষয় অভিভাবকরা নজরে রাখতে পারবেন মোবাইল মাধ্যমেই। তবে আমাদের কম্পিউটার না থাকায় আপাতত সমস্তটা নিয়ন্ত্রণ করতে
হচ্ছে মোবাইলেই।”